ইতিমধ্যে যাঁদের শরীরে গুটিগুটি রোগবালাই ঢুকতে শুরু করেছে, তাঁদের খাওয়াদাওয়ায় প্রচুর বিধিনিষেধ।যাঁদের প্রেসার, তাঁরা কোনও দিনই ভাতের পাতে কাঁচা নুন দিয়ে ইলিশ-ভাজা-তেল মেখে খেতে পারেন না।যাঁদের সুগার তাঁরা আড়চোখেও নজর দিতে পারেন না রস-চুপচুপে মাতৃভোগ বা রসমালাইয়ের খোলা পিঠের দিকে।যাঁদের কোলেস্টেরল— রেওয়াজি খাসি বলে এই চরাচরে কোনও শব্দ আছে, সেটা তাঁদের ভুলে থাকতে হয়।আর যাঁদের ইউরিক অ্যাসিড— খয়েরি ছোপ-ছোপ কিমা-নান দিয়ে, সবজেটে মুর্গ-পালং চাখাটা তাঁদের কাছে প্রায় স্বপ্ন।
Durg
পুজোর চারটে দিন হেলমেট-ছাড়া বাইক চালানোর অলিখিত পারমিশন পাওয়ার মতো যেন সব কিছুতেই ছাড়।এমনকী, বাড়িতে যাঁরা সারা বছর কত্তাদের খাওয়া নিয়ে টিকটিক করেন, তাঁরাও এ-ক’টা দিন তাঁদের সুকান্ত-র ছাড়পত্র দিয়ে থাকেন।মানে, যা খেতে ইচ্ছে হচ্ছে, খাও।বাঁধা গরু ছাড়া পেয়ে পাড়াপড়শির বাগানের মুলো খেয়ে ঘোরো— কেউ কিচ্ছু বলবে না।পুজোর দিনে সকালে মণ্ডপে গেলেই দেখা যাবে, দু’-চার জন প্রৌঢ়, বাচ্চা ভলান্টিয়ারটিকে বাবা-বাছা করে প্রসাদের থালার শশা-পেয়ারাদের সাইড করে কেবল চন্দ্রপুলি, নারকেল নাড়ু বা কদমার দিকে আঙুল দেখাচ্ছেন।তারপর সেগুলো মুঠোয় নিয়ে টুকটাক মুখে।বাড়ি ফিরে, রোজকার ডবলটোন দুধে ভেজানো ল্যাদলেদে কর্নফ্লেক্সের বদলে হয়তো ফুলকো ফুলকো লুচি আর সাদা-ছেঁচকি।সেই সঙ্গে গিন্নি যখন বিশেষ ছাড় হিসেবে একটি রাতাবি সন্দেশ এগিয়ে দিচ্ছেন— তখন কিন্তু মোটে ‘না’ বলা নেই।
হায় রে! গিন্নি তো আর জানেন না যে কত্তা অলরেডি মণ্ডপে দাঁড়িয়ে একমুঠো মিষ্টি মুখে পুরে বসে আছেন! দুপুরে কমপ্লেক্সের সপ্তমীর ভোগে রেওয়াজি খাসির তুলতুলে কালিয়া দিয়ে ফিকা জিরা রাইস।শেষপাতে সাবুর পাপড় আর গিশগিশে খেজুর ছড়ানো চাটনি।হোক হোক, ক্ষতি নেই।মা আছেন না!
সুগারকে বলাই আছে, ওরে বাপ পুজোর সময় বাড়াবাড়ি করিসনি! সন্ধেবেলায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে ‘আহা, খা-না খা-না’ করে বার্গার,ফিশফ্রাই কিংবা গুচ্ছের টপিং দেওয়া একটা বড়সড়ো পিৎজা কিনে দিয়ে, তা থেকে বেশ খানিকটা বাগাতে হবে না! গিন্নি আড়চোখে সব দেখবেন।তাঁর বিবেক বলবে— থানার মেজবাবুর স্টাইলে কত্তার পেটে একটা রামগুঁতো মারতে, কিন্তু হৃদয় ফিক করে হেসে বলবে, ‘আহা, বচ্ছরকার দিনে এইটুকুই তো খাচ্ছে মানুষটা...রোজ তো আর নয়।’ রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ঠাকুর দেখার শেষে ছেলেপুলেদের কমপ্লেক্সে গ্যারাজ করে, কত্তারা এ বার ফুরফুরে মেজাজে গিন্নিদের হাত-ধরে ছেলেবেলার বন্ধুদের বাড়ির আড্ডায় গিয়ে ঢুকবেন।সোফায় বসে হাতে গেলাস নিলেই সব যেন আলো-আলো।হইহই আড্ডার মধ্যে এগিয়ে আসবে গরম গরম টিক্কা কাবাব।যে বন্ধুটির বাড়ি এসেছেন, গত মাসে তাঁর ট্রাইগ্লিসারাইড ৪৫৭।পিপি ৩১০।সাতাশ দিন তেড়ে হাঁটার পর সব কিছু কমে গেছে মনে করে উনি আর পুজোর আগে ব্লাডটেস্টটা করাননি।কে যেন বলছিল, পুজোর আগে থেকেই প্যাথলজির আসল ডাক্তাররা নাকি গোয়ায় গিয়ে বসে থাকে।সব টেস্ট করে মাইনে-করা ঝাড়ুদারেরা।এই বন্ধুটি আবার কলেজজীবন থেকেই রামের পূজারী।ইদানীং বউয়ের ধমকে রামের স্নেহ থেকে বঞ্চিত।মায়ের কৃপায়, এই অকালবোধনে আবার রামের দেখা পেয়েছেন।তৎসহ দেখা পেয়েছেন ঠান্ডা কোলার।তাঁর মুখে এখন উত্তমকুমারের ভুবনভোলানো হাসি।নবমীর মাঝরাত্তিরে এই পানীয়টির শেষে মাটন রেজালা আর লাচ্চা পরাঠা রাজযোটক।তাই পুরনো বন্ধুরা মিলে এখন প্রফুল্ল মনে দুলে দুলে গাইছেন, ‘ও যে মানে না-আ মানা-আ-আ...’।