Advertisement
Durga Puja Outside Kolkata

জ়ুরিখ ‘গড ম্যাটার’ নিয়ে হাজির হন পুরোহিতমশাই

জ়ুরিখ শহরের পাশে, ‘লাংনাও আম আলবিস’ নামের একটা ছোট্ট গ্রামে গত চোদ্দো বছর ধরে দুর্গাপুজোর আয়োজন হচ্ছে।

সুইৎজ়ারল্যান্ডের দুর্গাপ্রতিমা। ছবি: প্রতিবেদক।

সুইৎজ়ারল্যান্ডের দুর্গাপ্রতিমা। ছবি: প্রতিবেদক।

অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
জুরিখ শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮ ১২:১৩
Share: Save:

এখানে শরৎ কালের নানা রূপ। কখনও রৌদ্রজ্জ্বল দিন, নীল আকাশ। কখনও বা কনকনে ঠান্ডা, বরফ পড়তে শুরু করে দিল। হ্যাঁ, সুইৎ়জ়ারল্যান্ডের কথা বলছি।

হোক না কলকাতা থেকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার দূরে। জ়ুরিখ শহরের পাশে, ‘লাংনাও আম আলবিস’ নামের একটা ছোট্ট গ্রামে গত চোদ্দো বছর ধরে দুর্গাপুজোর আয়োজন করছে সুইৎজ়ারল্যান্ডে বাঙালিদের একমাত্র সংগঠন ‘সুইসপুজো’। দিনক্ষণ, পঞ্জিকা মেনেই। এ দেশে এটিই একমাত্র দুর্গাপুজো।

যশ চোপড়ার ছবির দৌলতে এই দেশটা বাঙালিদের কাছে বিশেষ অপরিচিত নয়। ছোট্ট দেশ। ছবির মতো সুন্দর। যেখানে শুধু কলকাতা শহরে প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষ বাস করেন, সেখানে এই দেশের জনসংখ্যা আশি লক্ষ। ভিড় কাকে বলে, এখানকার মানুষ জানেন না। সব কিছুই হয় নিয়ম মেনে। সুইৎজ়ারল্যান্ডের মানুষজন আওয়াজ বেশি পছন্দ করেন না। রাত দশটার পরে বাড়িতে আওয়াজ হলে খোঁজখবর নিতে পুলিশ চলে আসে। এমনকি, বিশ্বকাপ ফুটবলের সময়ে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে যখন সারা রাত ধরে উৎসব চলেছে, তখন সুইৎজ়ারল্যান্ডে পুলিশের নির্দেশিকা ছিল, হইহট্টগোল করা যাবে শুধু খেলা চলাকালীন, আর খেলা শেষ হওয়ার পরে দু’ঘণ্টা। তার পর আওয়াজ করলেই জরিমানা। এই রকম একটা দেশেও কিন্তু আমরা ঢাক-ঢোল বাজিয়ে, হই-হুল্লোড় করে, কলাবৌ স্নান করাতে যাই জ়ুরিখ লেকে।

আরও পড়ুন: মুড়িয়ে গেল আমাদের ছোট্ট পুজোর নটে গাছ​

ক্রমশই জনপ্রিয়তা বাড়ছে আমাদের পুজোর। যা ছিল শুধু বাঙালিদের পুজো, সেখানে আজকাল আসেন জ়ুরিখ শহরের নানা কর্তাব্যক্তি। আসে সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও। ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে তাদের প্রচুর কৌতূহল। সেই সব নিয়ে খুদেদের নানা প্রশ্ন থাকে। সেই সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে আমাদের বাঙালি পরিবারের ছেলেমেয়েরা। জার্মান ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করে সমবয়সি ভিন্‌দেশি বাচ্চাদের। সে এক মজার দৃশ্য।

পুজো মণ্ডপে ঢুকলে হঠাৎ মনে হবে, কলকাতা বা মফস্‌সলের কোনও বড় পুজো।

পুজো প্রাঙ্গণ মুখরিত থাকে বাচ্চাদের হইচই আর বড়দের আড্ডা ও পরনিন্দা-পরচর্চায়। খাওয়া-দাওয়া, সন্ধেবেলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ধুনুচি-নাচ আর ফেসবুকে ঝলমলে ছবি। দেশ থেকে বিভিন্ন সঙ্গীতশিল্পীরা এসে অনুষ্ঠান করেন ‘সুইসপুজো’ মঞ্চে।

আরও পড়ুন: ১০ ইউরো চাঁদা দিয়ে শুরু হয় প্রথম সর্বজনীন​

প্রতিবারের মতো এ বারও কলকাতার সিঁথি থেকে আসছেন পুরোহিতমশাই, শ্রী জয়দেব ভট্টাচার্য। একবার কাস্টমসে ওঁকে দশকর্মা নিয়ে জিজ্ঞাসা করায় উনি উত্তর দিয়েছিলেন— ‘গড ম্যাটার’! উত্তর শুনে শুল্ক অফিসারদের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, জানি না। তবে পুরোহিতমশাই দশকর্মা সামগ্রীর পুরো প্যাকেট নিয়েই আমাদের কাছে পৌঁছেছিলেন। আর পুজোও সেরেছিলেন নির্বিঘ্নে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Outside Kolkata International Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE