Advertisement
Durga Puja Outside Kolkata

সাইবার সিটির শারদ-সরোদ

নিউমার্কেটের মতো সুলতান বাজার আছে। তবে বিচ্ছিরি রকমের মজাদার বার্গেনিং নেই।

গতবছর হায়দরাবাদের বাঙালিদের দুর্গা প্রতিমা।

গতবছর হায়দরাবাদের বাঙালিদের দুর্গা প্রতিমা।

অনয়া দত্ত মিত্র
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৮ ১৩:৩০
Share: Save:

হায়দরাবাদ শহরে বিরিয়ানির গন্ধে চাপা পড়ে শরতের শিউলি! কাশবন ছাড়া এক প্রকার নিঃসঙ্গ পেঁজা তুলোর মতো মেঘও!

তবে ঢাক-কাঁসর আর মন্ত্রোচ্চারণে এক টুকরো বাংলাই যেন ধরা দেয় নিজামের শহরে। পুজোর ক’টা দিন এ বার হায়দরাবাদ।

কলকাতা থেকে ষোলোশো কিলোমিটার দূরে এই শহরে বসবাসকারী বাঙালির সংখ্যা ৯ লাখের মতো। আর তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে লিখতে বসে একটা থ্রিলিং কাজ করছে বইকি! শহরটার সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় এক যুগের। তবে দুর্গাপুজোয় থাকা এই প্রথম।

আরও পড়ুন: দেশের স্মৃতি ফিরিয়ে দেওয়াটাই হইচই-এর মূল থিম​

না। এখানে আদি-অনাদি শাড়ির দোকান নেই, শপিং মলে ‘বাই ওয়ান গেট ওয়ান’ অফার নেই। উপচে পড়া ভিড় নেই।

নিউমার্কেটের মতো সুলতান বাজার আছে। তবে বিচ্ছিরি রকমের মজাদার বার্গেনিং নেই। ডিটিএইচে কলকাতার চ্যানেল না ঘোরালে অক্টোবরেও বোঝার উপায় নেই পুজো এসে গিয়েছে। কিন্তু ওই যে, ঢেকির স্বর্গ অ্যাসাইনমেন্টের মতো বাঙালি পুজো নিয়ে মাতবে না, তা আবার হয় না কি!

অতএব মিশন হায়দরাবাদের দুর্গাপুজো!

ইন্টারনেট আর ফেসবুক ঘাঁটার পর এ বার তথ্য যাচাইয়ের পালা।

তা ক’টি দুর্গাপুজো হয় তোমাদের হায়দরাবাদে?

প্রশ্নটা মাস তিনেক আগেই করেছিলাম আমার কর্তাকে, যখন প্রথম জানতে পারি আমার এ বারের পুজোয় বাপের বাড়ি, বার্ণপুর থাকা হচ্ছে না। উত্তর শুনে ভেবেছিলাম, এক দিন বেরোলেই তো সব শেষ! কী করব ষষ্ঠী থেকে দশমী? স্মার্ট ফোনের দৌলতে অবশ্য আমার কর্তা ভুল প্রমাণ হয়েছেন। এবং এখন মনে হচ্ছে ৫ দিনে কী করে শেষ করব ৮০-৯০ টি পুজো! হ্যাঁ, কুতুব শাহের ডেরায় দশভুজা তৈরির বরাতখাতা তো তাই বলছে।

আরও পড়ুন: সিঁদুরের লাল রঙে রাঙা হয়ে ওঠে সকলের মুখ​

সেকেন্দ্রাবাদের কাছে ত্রিমালগিরি। ওটাই হায়দরাবাদের কুমোরটুলি। তবে পটুয়াপাড়া বললে ভুল। আসলে এখানে এক জনই শিল্পী। জগবন্ধু পাল।

একটাই স্টুডিও। প্রথম বার হায়দরাবাদে এসেছিলেন ৩৮ বছর আগে। মাত্র এক সেট দুর্গা প্রতিমার বরাত পেয়ে। তেলুগু দেশ তাঁকে আর বাংলায় ফিরতে দেয়নি।

এ বার ক’জায়গায় ঠাকুর যাচ্ছে?

জগদীশবাবুর উত্তর, ৭২। মনে মনে ভাবলাম, এত!

ভুল ভাঙল ওঁর স্টুডিও দেখে। এই ৭২-এর মধ্যে অবাঙালি দুর্গা প্রতিমাও রয়েছে।

প্লাস্টার অব প্যারিসের ছাঁচের তুলনায় মাটির মূর্তির ফিনিশিং ভাল। তাই প্রচুর বরাত আসে গণেশের জন্য। অতিরিক্ত গণেশের চাপ আর খামখেয়ালি বৃষ্টির জেরে খানিকটা বেগ পেতে হচ্ছে শিল্পীকে। এখনও রঙের প্রলেপ দিতে পারেননি।

শহরের ধূলপেট, মঙ্গলহাট, নাগোল, কূকাটপল্লি, মিঞাপুরেও শুনেছি ঠাকুর তৈরি হয়। ওগুলোয় এ বার আর যাওয়া হল না!

কর্তার এক সহকর্মী গতবছর ফেসবুক লাইভ করেছিলেন। দেখেছিলাম কলকাতার শিল্পীরাই অনুষ্ঠান করেন। এ বার খোঁজ নিয়ে জানলাম, সেটি ছিল বঙ্গীয় সংস্কৃতি সঙ্ঘের মঞ্চ। যা সেকেন্দ্রাবাদ কিজ হাইস্কুলের পুজো নামেই পরিচিত। রোজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এখানকার বিশেষত্ব খাওয়াদাওয়া। তেঁতুল-কারিপাতার দেশে খাঁটি বাঙালি বাটা মশলার রসনা। কলকাতার নামকরা রেস্তরাঁও স্টল দেয় সেখানে।

রামকৃষ্ণ মিশন ও বাঙালি সমিতি পাশাপাশি। তবে ভিন্ন ঘরানার।

রাত জেগে ঠাকুর দেখা নেই। এখানে পুজো পরিক্রমা দুপুরেই। অন্তত বিজ্ঞাপন তাই বলছে। পুজো উপলক্ষে সপ্তমী থেকেই রোজ প্যাকেজ ট্যুর। ৫০০ টাকায় বাসে চেপে ১১টি পুজো দেখানোর ব্যবস্থা। কারও ক্যাচ লাইন ‘আপনিই বিচারক’, পুজো পরিক্রমা চলাকালীন বেছে নেওয়া শহরের সেরা পুজো।

চারমিনার নেতাজি সঙ্ঘ, সালারজং মিউজিয়ামের কাছে বেঙ্গলি ওয়েলফেয়ার, মিঞাপুরের সাইবারাবাদ বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন, বানজারা হিলসের কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন কিংবা হায়দরাবাদ কালীবাড়ি। দুর্গাপুজোয় টার্গেট অডিয়েন্স ধরতে আসরে কর্পোরেট সেক্টরও। বাঙালি আবেগে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা অবাঙালি কালচার! পুজোর দুপুরে মন্ডপে গোল-আড্ডা নয়, এখানে সপ্তমী-অষ্টমী ডিস্কো-ডান্ডিয়া!

সে হোক গে, যাক! পুজোয় প্রথম বার রাজ্যের বাইরে, একটু মন খারাপ তো হবেই। স্বাদ মেটাতে যে ঘোল পাচ্ছি, এটাই কম কিসের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Outside Kolkata International Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE