সে অনেক বছর আগের কথা...১৯৬৮ সালে কেমব্রিজ লে-আউট এলাকায় শুরু হয়েছিল ইন্দিরানগর সোশিও কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সর্বজনীন দুর্গাপুজো। সদস্য সংখ্যা তখন সাকুল্যে পঞ্চাশেরও কম।
তারপরে কাবেরি নদী দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। ব্যাঙ্গালোরের নাম বদলে হয়েছে বেঙ্গালুরু, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩০০। সঙ্গে বেড়েছে আনুষঙ্গিক সব খরচখরচা! কিন্তু পুজো আজও সর্বজনীন আছে।তিনদিন নিখরচায় লাইনে দাঁড়িয়ে পুজোর ভোগ খেয়ে যান অসংখ্য মানুষ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। প্রতিদিন সন্ধেবেলা খোলা মঞ্চে সুপ্রতিষ্ঠিত কলা-কুশলীদের অনুষ্ঠান দেখেন হাজার হাজার দর্শক। বিগত ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান আনুযায়ী, অষ্টমীর ভোগ খেয়েছিলেন তিন হাজার মানুষ এবং দশমীর দিন কুমার শানুর অনুষ্ঠান দেখতে জমায়েত হয়েছিলেন ১০ হাজার দর্শক-শ্রোতা।
শুধু বাঙ্গালিরা নন, এই পুজোতে সমান প্রাধান্য দেওয়া হয় কন্নড়ভাষী মানুষদেরও। পুজো প্রাঙ্গনের প্রতিটি ব্যানার এবং স্ক্রিনে, বাংলা ভাষার সঙ্গে অনুষ্ঠানসূচি জানানো হতে থাকে কন্নড় ভাষাতেও। কলা-কুশলীদের বাংলার সঙ্গে কন্নড় ভাষাতেও গান গাইবার জন্যে অগ্রিম অনুরোধ করা থাকে, চেষ্টা করা হয় একটি দিন স্থানীয় আর্টিস্ট আনার। একটি সন্ধে বরাদ্দ থাকে গারবা-ডান্ডিয়া নাচের জন্যে, প্রসিদ্ধ গারবা গায়কদের নিয়ে আসা হয় একটি জমাটি সন্ধ্যা উপহার দেবার জন্যে। বহু উত্তর ও দক্ষিণ ভারতীয় মানুষ সানন্দে অংশগ্রহণ করেন এই পুজোতে।
পুজোর বাজেটের একটি অংশ বরাদ্দ করা থাকে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের জন্যে। গাঁধী ওল্ড এজ হোম, রাকুম ব্লাইন্ড স্কুল, ইন্দিরানগর স্প্যাস্টিক সোসাইটি, ভারতীয় গ্রামীণ মহিলা সংঘ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলিতে অর্থ দান করা, দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে পেডেস্টাল ফ্যান, খাদ্যসামগ্রী, জামাকাপড় দেওয়া হয় পুজোর আনন্দে সকলকে অংশীদার করে নেওয়ার জন্যে।
এই বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রস্তুতি শুরু হয় জুন-জুলাই মাস থেকে। তৈরি হয় বিভিন্ন কমিটি, বিভিন্ন বিভাগের কাজ পরিচালনার জন্যে। ফিন্যান্স কমিটি হল এগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার কাছ থেকে বিজ্ঞাপন আদায় করা থেকে দরজায় দরজায় ঘুরে চাঁদা তোলা— সব করতে হয় এই কমিটির সদস্যদের। এছাড়াও আছে কালচারাল কমিটি, ভোগ রান্না এবং পরিবেশন কমিটি, রিসেপশন কমিটি, পুজোর কাজ করবার জন্যে কমিটি ইত্যাদি। মহিলা-পুরুষ, কচিকাঁচা, বয়স্ক সকলে মেতে ওঠেন পুজোকে সফল করবার জন্যে।
অ্যাসোসিয়েশনের মহিলা সদস্যরা খাওয়া-ঘুম-সংসার ভুলে পুজোর কাজে ডুবে যান এই পাঁচটি দিন। পুজোর আয়োজোন করা, প্রসাদের ব্যাবস্থা করা, অঞ্জলি সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করানো, ঠাকুরের ভোগ রান্না থেকে শুরু করে দশমীর দিন বরণ ও বিসর্জন অবধি সমস্ত কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করে তবে এঁদের ছুটি মেলে।
অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিটি সদস্য নিজেদের কর্ম এবং পারিবারিক জীবনকে ভুলে গিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন এই দুর্গা পুজো কে সফল করবার জন্যে। সকল সদস্যের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় এই পুজো ৫১ বছরে পদার্পন করল ২০১৯ সালে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy