Advertisement
Durga Puja 2019

ঢাকটা যদি কলকাতা থেকে ক্রাইস্টচার্চে আনা যেত

তাঁর পরিবার ভারতবর্ষ ছাড়ার সময়ে তাঁদের বাড়ির দুর্গাপুজোর রীতি পদ্ধতি ও ঐতিহ্য সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন।

ঝর্না দাশগুপ্ত
ক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ড শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:৩০
Share: Save:

অ্যান্টার্কটিকের আগে শেষ মনুষ্য বসতি, দক্ষিণ গোলার্ধে দু’টি দ্বীপ নিয়ে আমাদের নিউজ়িল্যান্ড।

এখানে মায়ের আসার খবর নিয়ে আসে বসন্তের হাওয়া আর চেরি ফুলের সমারোহ। জানলার বাইরে তাকিয়ে দেখি আমার টিউলিপ-ম্যাগনোলিয়ার প্রায় ফুটন্ত কুঁড়িগুলো হাসি মুখে মায়ের অভ্যর্থনার জন্য তৈরি।

নিউজ়িল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপের এই ক্রাইস্টচার্চ শহরের মুষ্টিমেয় কিছু বাঙালির উৎসাহ ও প্রয়াসে এ বার চতুর্থ বছরে পা দিতে চলেছে আমাদের দুর্গা পুজো।এ বছরেও তার প্রস্তুতি তুঙ্গে। এ বার পুরোহিত আমাদের ‘ক্রাইস্টচার্চ বেঙ্গলি কমিউনিটি’র এক সদস্য। তাঁর পরিবার ভারতবর্ষ ছাড়ার সময়ে তাঁদের বাড়ির দুর্গাপুজোর রীতি পদ্ধতি ও ঐতিহ্য সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। সেই মতো পঞ্জিকা-নির্দিষ্ট দিনে নিজেদের বাড়িতে পুজোর আয়োজন করেন ওঁরা।গত কয়েক বছর ধরে অবশ্য আর এক সদস্যা করবীই নিষ্ঠা ভরে আমাদের পুজোর দায়িত্ব পালন করে এসেছেন।ক্রাইস্টচার্চে আমাদের সর্বজনীন পুজো শুরু হওয়ার আগে করবীদের বাড়ির অষ্টমী পুজোকেই আমরা নিজেদের পুজো মনে করে এসেছি।

বারোয়ারি পুজোর জন্য চাই বড় জায়গা। আপাতত তাই একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের হলে আমরা পুজোর আগের দিন বিকেলে জড়ো হই।এটিই দু’দিনের জন্য হয়ে উঠবে আমাদের পুজো বাড়ি এবং আমাদের সকলের আস্তানা। সারা দিনের ব্যস্ততা কাটিয়ে শুধু রাতে বাড়ি ফেরা।

মায়ের ছেলেমেয়ে সমেত শোলার এক চালা প্রতিমা। ভোর ভোর শেষ করতে হবে সব সাজানো। বিদেশের অন্যান্য জায়গার মতো এখানেও সপ্তাহান্তের পুজো।সকালের পুজো ও পুষ্পাঞ্জলির পরে যথারীতি প্রসাদ বিতরণ এবং তার পরেই বাঙালির জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ— পঞ্চ পদে মহাভোজ।এই গুরু ভার প্রতি বছরই উৎসাহ নিয়ে সামলান পুরুষ সদস্যেরা।

বেলা বাড়তে না বাড়তেই জমে ওঠে পুজোবাড়ি। জাতি কূল নির্বিশেষে ক্রাইস্টচার্চের অনেক বাসিন্দাই পরিবার নিয়ে আমাদের উৎসবে যোগ দেন।বাচ্চাদের আঁকার প্রতিযোগিতাও বিচিত্রানুষ্ঠানের সময় হয়ে আসে। শেষেরটিতে অবশ্য তাদের বাবা-মায়েরাও অংশ গ্রহণ করবেন। সন্ধ্যা হতেই শুরু হয় আরতি। সঙ্গে ধুনুচি নাচ।সিডিতে বাজতে থাকে ঢাক। আর এ সবের মধ্যেই আমরা তলিয়ে যাই স্মৃতির পাতায়।

পরের দিনও সকলকে আসতে হবে। দুপুরের খাওয়া তো আছেই। আর তার পরে আছে মায়ের বরণও সিঁদুর খেলা। সব শেষে মাকে মুড়ে টুড়ে তুলে রাখা, যাতে পরের বছর মা অটুট অবস্থায় আমাদের মধ্যে আসতে পারেন। যদিও সামনের বছর নতুন প্রতি মা বানানোর পরিকল্পনা আছে। না, কুমোরটুলি থেকে নয়, এখানে, এই ক্রাইস্টচার্চেই যদি বানানো যায়!

প্রতিমা বানানোর মতোই মনের কোণে আরও একটা ছোট্ট ইচ্ছে লুকিয়ে রয়েছে। ঢাকি না হোক, কলকাতা থেকে একটা ঢাক যদি আনা যেত।উৎসাহী ঢাকির নিশ্চয় অভাব হবে না আমাদের মধ্যে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE