Advertisement
Durga Puja 2019

মরুভূমিতে পদ্ম ফোটে মায়ের আগমনে

পথ ভুল করা নতুন সঙ্গীরা মিলেই তৈরি হয় আমরা প্রবাসী দুবাই।

কমল বন্দ্যোপাধ্যায়
দুবাই শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:১২
Share: Save:

আরব দেশের কথা মাথায় এলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে দিগন্ত বিস্তৃত মরুভূমি। আর সেই মরুভূমির বুক চিরে ঘোড়া ছুটিয়ে যাওয়া আরব বেদুইন। সেই সব আরব্য রজনীর অমর গল্পগাথাকে পিছনে ফেলে মরুভূমির বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে আধুনিক সভ্যতার পীঠস্থান, দুবাই। আকাশচুম্বী অট্টালিকা, ঝাঁ চকচকে রাস্তাঘাট আর আধুনিক সভ্যতার প্রয়োজনীয় সব কিছু সাজিয়ে বুর্জ খালিফার মতোই নিজস্ব অস্তিত্ব জানান দেয় দুবাই।

শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস দুবাই প্রবাসী বাঙালির। ঘর থেকে দূর একাকী বিকেলগুলোতে মন খারাপেরা যখন কুয়াশা হয়ে ওঠে, মহীনের ঘোড়াগুলি তো পথ ভুল করবেই। পথ ভুল করা নতুন সঙ্গীরা মিলেই তৈরি হয় আমরা প্রবাসী দুবাই। বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে নবীন প্রজন্মের পরিচয় করিয়ে দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। নববর্ষ, রবীন্দ্র জয়ন্তী, বসন্ত উৎসব, কালীপুজো, লক্ষ্মীপুজো— এ সব কিছুই পালন করা হয়। আর শরৎ এলে আমাদের মনও নেচে ওঠে, আমরাও তৈরি হই আনন্দে মেতে ওঠার জন্য।

প্রিয় জন্মভূমির সঙ্গে আমরাও এক টুকরো বাংলাকে তুলে এনে শামিল হই বাঙালির প্রিয় উৎসব দুর্গাপুজোতে। না-ই বা থাকল টিপটিপ বৃষ্টি, শিউলির গন্ধ, গেরুয়া নদীর কাশফুল বা রাত জেগে লাইন দিয়ে ঠাকুর দেখা। সঙ্গে রইলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বরণ ডালা, নবপত্রিকা, সিঁদুরখেলা— এই সব চিরকালীন চির চেনা বাঙালির সংস্কৃতি নিয়েই আমাদের দুর্গাপুজো।

‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’— পিতৃপক্ষের অবসান আর মাতৃপক্ষের সূচনায় কুমোরটুলি থেকে মা এসে পৌঁছন ঠিক সময়ে। বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে সময় মিলিয়ে শুরু হয় পুজো। ষষ্ঠীতে আমন্ত্রণ, অধিবাস, মায়ের বোধন করে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। কলাবউ স্নান, নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সন্ধিপুজো, হোম— কোনও কিছুই বাদ থাকে না। প্রতি দিন নির্দিষ্ট সময়ে থাকে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ, ভোগ।

বাঙালির দুর্গাপুজো সম্পূর্ণ হয় না ভূরিভোজ ছাড়া। ব্যতিক্রম আমরাও নই। থাকে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত একসঙ্গে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া— সাবেকি বাঙালি পদ যেমন থাকে মেনুতে, তেমনই থাকে হাল আমলের জিভে জল আনা খাবার। বিদেশি সেফের হাতে বাঙালি পদ এক অনন্য স্বাদ এনে দেয়।

আরও পড়ুন: ঘরছাড়ারাই বোঝে, ঘরে ফেরার কী যে আনন্দ!

সন্ধ্যারতীর পর থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যার শুভ সূচনা হয় মায়ের আগমনী গান দিয়ে। সঙ্গে থাকে কবিতা, গান, নাচ, গীতিনাট্য, শ্রুতি নাটক, নাটক ও জমজমাট অন্ত্যাক্ষরী। কচিকাঁচারা সব সময় কলরব মুখরিত করে রাখে পূজামণ্ডপ। আমাদের পুজো শুধুমাত্র বাঙালি মহলেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অতিথিদের মধ্যে যেমন থাকেন ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশের মানুষ, তেমনই থাকেন বিদেশি অতিথিরাও। প্রকৃতপক্ষেই পুজো হয়ে ওঠে মানুষের মিলনক্ষেত্র।

‘নবমীর নিশি পার যেন না হয়’— এই আশা মনের মধ্যে থাকলেও দশমীর ভোর হয়। ভারাক্রান্ত মনে এ বার মা কে বিদায় জানাবার পালা। বরণডালা সাজিয়ে মাকে বিদায় জানানো আর সঙ্গে থাকে সিঁদুরখেলা।

দশমীর চাঁদ যখন হারিয়ে যায় দিগন্তে, মন খারাপেরা তখন দানা বাঁধতে থাকে, ঠিক সেই মুহূর্তে এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া জানিয়ে দেয় শীত আসছে। শীতের পর বসন্ত, আবার শুরু হয় দিন গোনা.... মায়ের আগমনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE