Advertisement
Durga Puja 2019 Ananda Utsav 2019 Durga Puja Outside Kolkata International Durga Puja

ফেলে আসা স্মৃতিরাই জেগে ওঠে প্রবাস-পুজোয়

এখন শুধু লন্ডনেই ৪০টির বেশি পুজো হয়।

শ্রাবণী বসু
লন্ডন, ব্রিটেন শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:২৭
Share: Save:

শুরুটা হয়েছিল সেই ১৯৬৩ সালে। ৩০ জন অ্যাডাম স্ট্রিটের ইন্ডিয়া লিগ অফিসে বেঙ্গলি ইনস্টিটিউটের সরস্বতী পুজো দিয়ে। বাঙালি পড়ুয়াদের একটা দল তখন খাওয়াদাওয়া আর আড্ডার জন্য প্রায়শই একসঙ্গে বসত। সেই সান্ধ্য আড্ডার হাত ধরেই আসে
দুর্গাপুজোর ভাবনা।

ওই পড়ুয়াদের এক জন আড্ডার মধ্যে বলে উঠলেন, ‘‘এ বার দুর্গাপুজো করতেই হবে।’’ ব্যস, মেতে ওঠেন বাকিরাও। প্রত্যেকে ১০ পাউন্ড দিয়ে এগিয়ে আসে। তখনকার দিনে ১০ পাউন্ড অনেক। বাকিটা তোলা হয়েছিল অন্য ভারতীয়দের থেকে। দুর্গাপ্রতিমা এসেছিল কলকাতা থেকেই। অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদক তুষারকান্তি ঘোষ সে প্রতিমা উপহার দিয়েছিলেন। স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিন বন্দর হয়ে ইংল্যান্ডে পৌঁছেছিল সেই প্রতিমা।

এ বার পুজো আসতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। পাঁচ দিনের উৎসব নিয়ে এ বারও উৎসাহের খামতি নেই। এখন শুধু লন্ডনেই ৪০টির বেশি পুজো হয়। বিখ্যাত পুজোগুলোর মধ্যে রয়েছে হ্যামস্টেড, ক্যামডেন, ওয়েম্বলি, ইলিং এবং হ্যারো। আরও কিছু আছে উত্তর-পশ্চিম লন্ডনে।

এখন ঠান্ডা পড়ছে একটু একটু করে। তার মধ্যেই ভোগ খাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখা আর বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করার কথা ভেবে বাঙালিরা টগবগ করে ফুটছে। আর এ বার তো পুজো সপ্তাহান্তেই পড়েছে। তাই ভিড়ও হবে দ্বিগুণ।

আরও পড়ুন: ক্লিভল্যান্ডে দুর্গাপুজো হয় চার্চে

১৯৬৩ সালে লন্ডনের সেই পুজো ঘিরেও ছিল দারুণ উন্মাদনা। ছাপাখানায় কাজ করা এক সদস্য কিছু লিফলেট ছাপিয়ে এনেছিলেন। অক্সফোর্ড স্ট্রিট আর পিকাডিলি সার্কাসে সেগুলো বিলি করেছিলেন পড়ুয়ারা। সে বার অম্বালা নামে একটা মিষ্টির দোকানও খুলেছিল। তারাই প্রসাদের জন্য ফল-মিষ্টি বিতরণের দায়িত্ব নেয়। পুজোটা হয়েছিল রাসেল স্কোয়ারের মেরি ওয়ার্ড সেন্টারে। এডিনবরা, গ্লাসগো এবং সুদূর জার্মানি-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ আসতেন এই পুজো দেখতে। ক্রমে ক্রমে দলটাও বড় হয়েছে। সেই আয়োজকদের অনেকেই এখন বাবা-মা হয়ে গিয়েছেন।

১৯৬৫ সালে ইন্ডিয়ান ওয়াইএমসিএ-তে সরে যায় এই উৎসব। তার পরের বছর বেলসাইজ পার্কের হ্যামস্টেড টাউন হলে। দলটা আরও বেড়েছে। ভিড় যখন ফুটপাতে উপচে পড়তে শুরু করে, আয়োজকরা বুঝলেন, আরও বড় জায়গা লাগবে পুজোর জন্য। এর পরেই ক্যামডেন টাউন হলে চলে গেল পুজো। রোজ গড়ে সেখানে আসতেন দু’হাজার মানুষ।

আরও পড়ুন: মরুভূমিতে পদ্ম ফোটে মায়ের আগমনে​

সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন স্বরাজ পল, বাগরি এবং নির্মল সেথিয়া। তবে এর পরে ওই পুজো কমিটিতে চিড় ধরে। ক্যামডেন টাউন হলে-ই রয়ে যায় একটি পুজো। আর অন্যটি ফিরে যায় বেলসাইজ পার্কের হ্যামস্টেড টাউন হলেই।

এখানে আর একটি জনপ্রিয় পুজো ওয়েম্বলিতে নির্মল মুখোপাধ্যায় পরিবারের পুজো। এ বার এটি ৪১ বছরে পা দিচ্ছে। বলা হয়, লন্ডনের সেরা ভোগ এখানেই মেলে! প্রশংসা হয় মুখোপাধ্যায় পরিবারের আন্তরিকতারও। উৎসবের পরিবেশ, খেলাধুলো, ভোগের জন্য নাম রয়েছে হ্যারো আর্টস সেন্টারের পুজোরও। ইলিং টাউন-হলের পুজোয় মুখরোচক খাবারের স্টলের ভিড়।

টাউন হলের পুজোগুলো ছাড়াও আছে স্লাও-এর বেলিস হাউসে ‘রয়্যাল বার্কশায়ার বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন’-এর পুজো। এটা খোলা জায়গায় হয় বলে কলকাতার পুজো প্যান্ডেলের অনুভূতিটা ফিরে আসে। এ বার এ পুজোয় বাড়তি আকর্ষণ, ভিডিয়োয় বাংলার ক্রিকেটার ও ভারতের
প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের তরফে আসা শুভেচ্ছা-বার্তা। প্রসাদ বিতরণে পরিবেশ-বান্ধব প্লেটও ব্যবহার করছে তারা। সিঁদুর খেলা আর বরণে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে বিবাহিত-অবিবাহিত সব মেয়েকেই।

প্রবীণদের জন্য এটা আবেগের সময়। নস্টালজিয়ার দিন। ফেলে আসা বাড়ির পুজো মনে পড়ে ওঁদের। আর কাজের চাপে দম ফেলতে না পারা এখনকার প্রজন্ম পুজোয় খোঁজে একটু অবসর। ছোটরা সেজেগুজে, ভোগ খেয়ে মজা করতে তৈরি।

লন্ডনে বিসর্জন হয় না। প্রতিমা আর বাকি সাজসজ্জা গুছিয়ে রেখে দেওয়া হয়। যাতে পরের বছর ফের কাজে লাগানো যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE