Advertisement
Durga Puja 2020

মিলেমিশে উৎসবে মাতা হচ্ছে না সিডনির

অসুরের বডি দেখে স্পাইডারম্যান সুপার এক্সাইটেড! দু’হাত তুলে করলেন প্রণাম!

আশীষ ভট্টাচার্য
সিডনি শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২০ ০০:১৫
Share: Save:

সিডনির পুজো এতই জমজমাট যে, এখানকার পুজো ফেলে কেউই দেশে যেতে চান না। আমাদের অমিতের স্ত্রী রোজি গত বছর কলকাতার পুজোয় সিঁদুর খেলতে গিয়ে ভিড়ের ধাক্কা খেয়ে অসুরের কোলে ধপাস করে বসে পড়েছিল। তিনটে পাড়ার ছেলে ওকে টেনে তুলেছে। কী কাণ্ড!

‘সিডনি উৎসবে’র পুজো হচ্ছে আজ ১২ বছর ধরে। এ বার করোনার জ্বালায় সব মাটি! থিম নেই, তবে এ পুজোর প্রতিমা কলকাতার কুমোরটুলি থেকে আসে না। মাটি, কাঠ, পেপার-ম্যাশ, প্লাস্টার দিয়ে এখানেই তৈরি করা হয়। তার পরে মা-কে শাড়ি পরানো, গয়না, হেয়ার স্টাইল সব কিছু মেয়েরাই মিলেমিশে করে। কোন হাতে কোন অস্ত্র যাবে, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, অসুরের গোঁফের সঙ্গে দাড়ি যোগ করা হবে কি না- এমন সব গম্ভীর বিষয়ে আলোচনাও হয় যথেষ্টই! অবশেষে সুসজ্জিতা উমা সন্তান-সন্ততি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হন স্ট্র্যাটফিল্ড গার্লস স্কুলের বড় হল ঘরে।

গোটা স্কুল চত্বরটাই হয়ে ওঠে পূজা-প্রাঙ্গণ। কোথাও রান্না হচ্ছে, ম ম করছে ভোগের খিচুড়ি আর লাবড়ার গন্ধে। সেজেগুজে, হেলেদুলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মানুষ। ছোট ছোট ফুলের মতো বাচ্চাগুলো ছোটাছুটি করছে। অনেকে প্রসাদ নেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে গেছে। লাল পাগড়ি মাথায় সৌরভ ঢাক বাজাচ্ছে। ঢাকের তালে কোমর দোলাচ্ছেন কাকিমা, বৌদিরা। দেশ থেকে পড়তে আসা মেয়েদের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে ছেলে পড়ুয়ারা। স্কুলের প্রিন্সিপাল মিসেস এঞ্জেলা লেরিস্ এককোণে বসে পুরোহিত বাসব রায়ের যজ্ঞে ঘি ঢালা দেখছেন। মলি আহমেদ দলবল নিয়ে কোথায় ভোগ প্রসাদ দেওয়া হবে, তার তদারকিতে ব্যস্ত। সব মিলিয়ে এক জম্পেশ ব্যাপার! রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, সবাই মিলেমিশে আনন্দ করাকেই বলে ‘উৎসব’। সিডনি উৎসবের পুজোটাও কিন্তু ঠিক তা-ই।

আরও পড়ুন: কোভিড-হীন তাইওয়ানে পুজোয় সামিল বাঙালিরা

মা-কে শাড়ি পরানো, গয়না, হেয়ার স্টাইল সব কিছু মেয়েরাই মিলেমিশে করে।

পুজোয় ‘উৎসব’ নামে একটা পত্রিকা বার করা হয় প্রতি বছর। বড়দের পাশাপাশি খুদে লেখকরাও লেখে তাতে। গতবার সাত বছরের রৌনক বিশ্বাস লিখেছিল পুজো দেখতে আসা স্পাইডারম্যানের কথা- সে এক হৈ চৈ কাণ্ড! অসুরের বডি দেখে স্পাইডারম্যান সুপার এক্সাইটেড! দু’হাত তুলে করলেন প্রণাম!

সুসজ্জিতা উমা সন্তান-সন্ততি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হন স্ট্র্যাটফিল্ড গার্লস স্কুলের বড় হল ঘরে।

সন্ধ্যারতির পরে এখানে হয় মন মাতানো বিচিত্রানুষ্ঠান। নাচে, গানে কবিতায় ভেসে যায় পরবাসী মন। আর রাতের খাবারের কথা কী আর বলব! হাজার দুয়েক দুর্গা-ভক্তের জন্য স্কুলের মাঠেই রান্না হয় মটন বিরিয়ানি। ধোঁয়া-ওঠা বিরিয়ানি খেতে খেতে জনগণ বলেন, শারদোৎসব ব্যাপারটা নেহাত মন্দ নয়!

আরও পড়ুন: নবি মুম্বইয়ে পুজোর বড় হলঘরটা এখন কোভিড সেন্টার!

তবে দীর্ঘশ্বাস চেপে বলতে হচ্ছে, এ বার এ সব কিছুই হয়ে উঠবে না। পুজোটাই যে হচ্ছে না আসলে। করোনার কাঁটা! তবে আসছে বছর আশা করি আবার হবে!

ছবি সৌজন্য: লেখক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE