Advertisement
Durga Puja 2020

সিদ্ধি না খেলে পুজোই মাটি, এ বছর ট্রাই করব?

ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি ছোটালে কেমন হয়? এমনিতেই লং ড্রাইভ ভালবাসি। লন্ডনের বদলে কলকাতার রাস্তাতেই যদি সেটা পারি, পুজো জমে যাবে।

অর্জুন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২০ ১২:৩০
Share: Save:

পুজো মানেই চার-পাঁচটা দিন দুনিয়া ভুলে হুল্লোড়, এ রকম কোনও বছরেই হয়নি। এ বছর তো আরও নয়। করোনাকে থ্যাঙ্ক ইউ! এই উপায়ে ভিড় এড়ানোর একটা দা-রু-ণ সুযোগ দেওয়ার জন্য। শুধু খারাপ লাগছে একটাই ভেবে, আমাদের অভিষিক্তা আবাসনের পুজোটা ভী-ষ-ণ মিস করব। গত বছর সবাই মিলে প্রচণ্ড মজা করেছিলাম। এ বছর পুরো কাটা চিহ্ন। মেয়ে খুবই ছোট। কম করেও যদি ৪০-৫০ লোক থাকেন পুজোর জায়গায়, ভীষণ ঝুঁকির ব্যাপার হয়ে যাবে সবার পক্ষেই।

গাড়ি করে চল যাই...

তার থেকে বেটার অপশন গাড়ি করে মেয়ে, বউকে নিয়ে টুক করে ঠাকুর দেখে নেওয়া। একটু সন্ধে সন্ধে হবে। চারপাশ ঝলমলিয়ে উঠবে নানা রঙের আলোয়। গাড়ির ভিতর আমরা তিন জন। করোনাসুর কেমন জব্দ! পারলে প্রত্যেক দিনই এটা করার ইচ্ছে আছে। নো রিস্ক। নো ভিড়-ভাট্টা। নো ঠ্যালাঠেলি। পুজো শুধু প্যান্ডেল, ঠাকুর বা আলোর সাজ তো নয়। পুরো আবহ নিয়ে বাঙালির শারদীয়া। গাড়িতে বসেই ‘চোখ ক্যামেরা’য় ধরে নেওয়ার চেষ্টা করব সেই আমেজ। আমি কিন্তু এতেই খুশি।

হাউজ পার্টি... কেমন বুদ্ধি?

অচেনা ভিড়ে না-ই হারালাম। চেনা মানুষের সঙ্গে আড্ডা দিতে তো মানা নেই! একদিন হাউজ পার্টি দিলে কেমন হয়? এই ধরুন, একদিন ফ্ল্যাটে ডাকলাম মা-বাবা, শাশুড়ি-শ্বশুরমশাই, শালাবাবুকে ডেকে নিলাম। খাওয়াদাওয়াও থাকবে। দারুণ না ব্যাপারটা? অনেকেই হয়ত বলবেন, দাদা গৌরব আর বউদি ঋদ্ধিমা কোথায় গেলেন? ওঁদেরও কিছু প্ল্যান-প্রোগাম থাকে। এ বছর হয়ত হবে না। তাই আমরাও চলে যেতে পারি। কিংবা ওঁদেরও একদিন ডেকে নিতে পারি। প্রতি বছর সাধারণত এই ভাবেই পুজো কাটিয়ে দিই। খুব হইচই, দল বেঁধে ঠাকুর দেখতে বেরোনো--- আমার ঠিক আসে না।

এখনও ধুতি সামলাতে পারি না।

পুজোয় বিশুদ্ধ বাঙালিয়ানা... ডায়েটে ‘মারো গোলি’

সারা বছর ডায়েট। ওই চারটে দিনেও খাওয়া থেকে দূরে! রইল কী জীবনে? তাই ডায়েটে মারো গোলি। খাওয়া বন্ধ হবে না। বদলে জিম, ওয়র্ক আউট থাকবে। আমি না সব ধরনের খাবার খেতেই পছন্দ করি। বেশি পছন্দ করি কন্টিনেন্টাল ডিশ। তবে পুজো স্পেশ্যাল মেনুতে বিশুদ্ধ বাঙালিয়ানা না থাকলে কেমন যেন অস্বস্তি করে। তাই বাংলা আর উত্তর ভারতের খাবার মনে হচ্ছে জায়গা দখল করবে। দুপুরে বিরিয়ানি, রাতে তন্দুরি--- এমন কম্বিনেশন হতেই পারে। চার দিন চার রকম হলে আর ভাল! একদিন চাইনিজ, আরেক দিন কন্টিনেন্টাল। ভাবলেই দিল খুশ! তবে রেস্তরাঁয় যাচ্ছি টাচ্ছি না। বাইরে খেতে যাওয়াটা বেশ চাপের হয়ে যাবে। ‘বেরব না বেরব না’ করেও অনেকেই বেরিয়ে পড়বেন, বুঝতেই পারছি। আর লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে খাওয়া? জন্মে করিনি, এখন খামোখা করতে যাব কেন? তার চেয়ে অনলাইনে অর্ডার দেব। হাত-পা ছড়িয়ে আরাম করে বাড়িতে বসে খাব।

আরও পড়ুন: পুজোর আগেই বন্ধ হয়ে যাবে 'কাদম্বিনী' ধারাবাহিক ভাবিনি!

বিয়ের আগে সেই যে সৃজা এল...!

অনেকেই জানতে চান, বিয়ের আগেও কি আমার পুজো এ রকমই ছিল? এখনকার মতো? ভিড় থেকে দূরে। নিজের মতো করে। রাত জেগে বন্ধুদের সঙ্গে তাণ্ডব, মেয়ে দেখা...ছিল না? বিশ্বাস করুন, ছিল না। কারণ, যে বয়স থেকে এই সব করার তখন থেকেই জীবনে সৃজা। ওকেই ঝারি মেরে ওর সঙ্গে জুড়ে গেলাম! স্কুল, কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে বেরোনোর সময়েও আমরা একসঙ্গে। আর রাত জেগে ঠাকুর দেখা? কোনও কালেই ছিল না। এখন তো পুরো উৎসবটাই গুটিয়ে বাড়িতে নিয়ে চলে আসি। সারা বছর এত ধকল পোহাতে হয়, এই পাঁচটা দিন তাই ‘ওম শান্তি ওম’।

সব্যসাচী চক্রবর্তী আমার থেকেও ঘরকুনো

আমরা যখন ছোট, বাবা তখন দাপিয়ে কাজ করছেন। সারা বছর তাঁর দেখা পাওয়াই ভার। সবাই মনে করেন, এই পাঁচটি দিন বাবা বোধহয় আমাদের নিয়ে দারুণ সময় কাটাতেন। হইহই করতেন। সে গুড়ে বালি! বাবা আমার থেকেও ঘরকুনো। কলকাতা ভাসছে শারদীয়ার আনন্দে। বাবা বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে সপরিবারে শহরের বাইরে। এখনও বাবা পারলে পুজোয় আর কোথাও না হোক শান্তিনিকেতন যেতে পারলেও বেঁচে যান। কংসেকম হাফ পুজোও বাইরে কাটাবেন। শহরে যে কটা দিন, একদম ঘরের মধ্যে সিঁধিয়ে।

আরও পড়ুন: দশমীতে মাকে বরণ করে সিঁদুর খেলি, লোকে দেখে বলে শ্বেতা বিবাহিত!

আমার শহরের পুজো দেখা শুরু ২০০৬ থেকে। মনে আছে, খুব ছোট বেলায় একবার দিল্লি গেছিলাম। সেখানকার বাঙালি পাড়ার পুজো আবছা মনে পড়ে। বাংলার বাইরে এই আমেজ চাইলেও মেলে না। তাই পুজো বললে কলকাতাই সেরা আমার কাছে।

সারা বছর এত ধকল পোহাতে হয়, এই পাঁচটা দিন তাই ‘ওম শান্তি ওম’।

পাঞ্জাবি অবশ্যই...কিন্তু ধুতি নয়

ওয়্যার ড্রোবে আমার একটু ভারী রং আর কাজের বেশ কিছু পাঞ্জাবি আছে। লোকে তাই দেখে বলে, অর্জুন প্রচণ্ড ফ্যাশানিস্ত। আমি আদৌ সেটা নই। ইনস্টাগ্রামে যে সব পোশাক বা পাঞ্জাবিগুলো দেখেন সেগুলো পুরোটাই ফ্যাশন শুটের জন্য। ওগুলো পরে আমি স্বচ্ছন্দ নই। তবে পাঞ্জাবি পরতে ভালবাসি। এক কালার বা সলিড কালার পরি। ভারী কাজের নয়। এখানেও মজা আছে। ছেলে বেলায় একেবারেই এথনিক পোশাক গায়ে তুলতাম না। এখন উৎসব মানেই সনাতনী সাজ। কাজের দিলে টি-শার্ট, জগার্স অবশ্যই। পুজোয় সংস্কৃতি মেনে সাজব। তা বলে ঝুতি-পাঞ্জাবি ভেবে বসবেন না! এখনও ধুতি সামলাতে পারি না। শেষে কিছু একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। পাঞ্জাবি তালিকায় আছে। তবে পাজামা বা চোস্তের সঙ্গে।

আরও পড়ুন: ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়েছিলাম, পুজোর ভিড় দেখলেই তাই দশ হাত দূরে!

এ বছর সবই অন্য রকম। পুজো, পুজোর আবহ---সব। তাই ২০২০-র জন্য আমার দুটো নতুন পরিকল্পনা আছে। এক, আমি যে ভিড়কে ভয় পাই, সেই ভিড় মনে হচ্ছে তুলনায় কম থাকবে। শহর কলকাতা এ বারে হয়ত হাল্কা-পলকা। ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি ছোটালে কেমন হয়? এমনিতেই লং ড্রাইভ ভালবাসি। লন্ডনের বদলে কলকাতার রাস্তাতেই যদি সেটা পারি, পুজো জমে যাবে।

শুনেছি, সিদ্ধি না খেলে নাকি পুজোয় পূর্ণতা আসে না। কোনও দিন চেখে দেখিনি। এ বছর ট্রাই করব? যদি অনলাইনে মেলে? আপনারা কী বলেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE