পোশাকে থাকুক নিজস্বতা।
পুজো আসবে আর সঙ্গে করে ফ্যাশনকে নিয়ে আসবে না, তা আবার হয় না কি! আর ফ্যাশন ও স্টাইল স্টেটমেন্টের জোরে পুজোর ক’দিন ভিড়ের মধ্যমণি হয়ে ওঠা কিন্তু খুব সহজ নয়। আবার ফ্যাশন সম্পর্কে কিছু না জেনেই কিছু একটা পোশাক পরে ফেললেই হল, এমনটাও কাজের কথা নয়।
তা বলে কি ফ্যাশন সম্পর্কে খুব পড়াশোনা করে তবে পোশাক বাছতে হবে? মোটেও তা নয়। বরং বিশেষজ্ঞ কারও টিপস মাথায় রাখলে সহজেই পোশাক নির্বাচনে সুবিধা হবে। ছেলে ও মেয়েদের পোশাক বাছতে বসে কী কী বিষয় অবলম্বন করতে হবে জানেন? পরামর্শ দিচ্ছেন ডিজাইনার অভিষেক নাইয়া।
‘‘অনেক সময়ই ট্রেন্ডের জালে পা দিয়ে আমরা নিজস্বতা হারাই। সেটাও কিন্তু সাজকে নষ্ট করে দেয়। তাই যা-ই করতে হবে তা কিন্তু খুব বুঝে।’’ অন্তত এমনটাই পরামর্শ দিলেন অভিষেক। তাঁর দেওয়া পুজোর ফ্যাশনের কিছু জরুরি টিপস রইল আপনার জন্য, যা এই পুজোয় আপনাকে আলাদা করে নজরকাড়া করে তুলতে সাহায্য করবে।
অভিষেকের মতে, পুজোর আগে যখন ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন, তখন সময় নিয়ে ভেবে দেখুন আপনি তাতে স্বচ্ছন্দ কিনা। এটাই কিন্তু সাজের মূল কথা।এমনিতেই পুজো মানে হাজার রংয়ের মেলা আর আলোর রোশনাই। সেই আমেজে আপনিও যদি নিজের স্টাইলকে খুব জমকালো করে ফেলেন, তা হলে ভিড়ে মিশে যাবেন যে! তা বলে কি পুরোপুরি না করবেন ট্রেন্ডকে? একদমই না, বরং নিজের গঠন ও পছন্দকে মাথায় রেখে ট্রেন্ডেও আনুন স্বতন্ত্রতা।
মেয়েদের ফ্যাশনে এবার সবথেকে জনপ্রিয় লং লেংথ। অভিষেকের মতে, লং লেংথেই সেজে উঠুন এই পুজোয়। কিন্তু ফ্যাব্রিক পছন্দ করুন বিবেচনা করে। ফ্যাব্রিকের ক্ষেত্রে চোখ বন্ধ করে বেছে নিন হ্যান্ডলুম, খাদি বা সুতি। শাড়িতেও বেছে নিন নরম মসলিন, কাতান সিল্ক বা তসর। এগুলো যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনই পুজোয় ঘোরার ধকলেও সহায়। রঙের ক্ষেত্রে নিজের গায়ের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখুন। একটু চাপা রং হলে উজ্জ্বল রং পরুন। অনেকেই চাপা রং হলে উজ্জ্বল রং এড়িয়ে চলেন এই ধারণা ভুল।
এই বছরে অভিষেকের কাজে পুরোভাগে আছে প্রকৃতির চিত্রপট। কাঠবিড়ালির পেয়ারা থেকে কাক-নুড়ির গল্প, প্রিন্টে পাবেন গল্পকথাও।“দুর্গাপুজো আমাদের ঐতিহ্য। তাই এই প্রিন্টে হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিকে ফ্যাশনের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনারই প্রচেষ্টা করেছেন অভিষেক।পদ্ম, মাছ, সব ক্ষেত্রেই থাকছে প্রকৃতির ছোঁয়া।
মেয়েরা ফ্যাশন আলোচনায়শিরোভাগে থাকলে ছেলেরাই বা পিছিয়ে থাকেন কেন! কালো, খয়েরি বা নীলের গাঢ় শেডগুলি ছেড়ে অভিষেকের উপদেশ রং নির্বাচনে তাঁরা আ বার হয়ে উঠুন সাহসী। “আমার কাছে এরকম অনেক ছেলেরা এসেছে, যারা নতুন কিছু ট্রাই করতে আগ্রহী, কিন্তু তাঁদের গাইড করার কেউ নেই। তাঁরা নিশ্চিন্তে বেছে নিতে পারেন নানা শেডের রং ও খাদি বা লিনেন,” জানালেন অভিষেক।
ছেলেদের ফ্যাশনে ডিজাইনারের দাওয়াই বড় প্রিন্টের, লং,আসিমেট্রিক কাজের কুর্তা। তবে পুজোর পাঁচ দিনের রোজই কেউ কুর্তা পরবেন একথাও ভাবা ভুল হবে। তবে তার উপায়ও বাতলে দিয়েছেন তিনি। “ছেলেরা জিন্স ছেড়ে ট্রাউজারের দিকে ঝুঁকুন। ট্রাউজার যেমন আরামদায়ক, তেমনই ট্রেন্ডি। নতুনত্বের ছোঁয়া আনতে ট্রাউজার রাখুন অ্যাঙ্কেল লেংথ। আর সঙ্গে অন্যরকম কিছু পরতে চাইলে ট্রাই করুন কলার ছাড়া অন্য ডি়জাইনের নেকলাইন। পায়ে থাকুক একজোড়া কোলাপুরি।”
পুজোর ট্রেন্ড অণুসরণ করুন আর না করুন, অভিষেকের সবথেকে বড় সতর্কবাণী— রঙের পিছনে ছুটতে গিয়ে যেন হারিয়ে ফেলবেন না নিজস্বতা। রঙের ভিড়েই যদি হারিয়ে যান, তা হলে ফ্যাশন ও স্টাইল, এই দুইয়ের দৌড়েই আপনি পিছনে যাবেন।
বরং পুজোর পাঁচ দিনে একই ধরনের স্টাইল আপন করে নিন। এ বার তাতে একটু এদিক-ওদিক করে মিশিয়ে দিন আধুনিকতা ও ঐতিহ্য। যদি কুর্তা-পাঞ্জাবিতে স্বচ্ছন্দ হন, তবে তা-ই পরুন, তবে নকশা ও কলারের স্টাইল বা কাটিংয়ে চেঞ্জ আনুন। যদি শার্ট পরতেই ভালবাসেন, তা বলে ফর্মাল, পার্টি ওয়্যার, ইনফর্মাল মিলিয়ে মিশিয়ে পরুন। সঙ্গে বদলে বদলে নিন প্যান্ট। কখনও চাপা ট্রাউজার, কখনও অফিস ট্রাউজার আবার কখনও কার্গোও বেছে নিতে পারেন।
ছবি সৌজন্য: ডিজাইনার অভিষেক নাইয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy