Advertisement
Durga Puja Food

তিরুঅনন্তপুরমের হেঁশেল মিশেছে ‘সারফিরে দ্য কোস্টাল ক্যাফে’-তে

কলকাতায় রজনী সেন লেনে রেস্তরাঁ তৈরি করেছেন ঈশানী।

নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

মনীষা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:৪১
Share: Save:

এ যেন বাঙালি মেয়ের মালয়ালি হয়ে ওঠার গল্প। সেই গল্পের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে সমুদ্রের হাওয়ার নোনা গন্ধ আর তার সঙ্গে তীরের ধারের চলতি ধাবার খাওয়াদাওয়ার স্বাদ। যার ফসল কলকাতার মুদিয়ালি সর্বজনীনের কাছে ‘সারফিরে, দ্য কোস্টাল কাফে’।

ঈশানী সিংহ প্রিয়দর্শিনী। কলকাতায় বেড়ে ওঠা মেয়ে। কলকাতার ফুচকা, ঘুগনি, ভেলপুরির স্বাদে বিকেলগুলো রঙিন হয়ে থাকত যখন, তেমনই এক বিধুরবেলায় চোখে চোখ কেরলের যুবকের সঙ্গে। তারপর আর্মেনিয়াম ঘাট পেরিয়ে জীবনের নাও গিয়ে ঠেকল তিরুঅনন্তপুরমে।

সেখানেই কোস্টাল খাবারের সঙ্গে জিভের প্রেম। এই প্রেমে অনেকটাই অনুঘটক হয়ে উঠেছিলেন ভাল রান্না করা দক্ষিণী শাশুড়ি। কোস্টাল খাবার মানেই যে শুধু কারি পাতা, সর্ষে আর নারকেলের কেরামতি নয়, বরং এই খাবারের মধ্যেও যে লুকিয়ে আছে হাতযশ আর ঘরোয়া কিছু মশলার এদিক-ওদিক প্রয়োগ তা জানা হল আরব সাগরের তীরে বসে শাশুড়ির কাছেই।

আরও পড়ুন: এ বার পুজোয় রেস্তরাঁর মটন তৈরি হোক আপনার রান্নাঘরেই

আরও পড়ুন: পুজোর রান্নায় থাকুক বনেদিয়ানার ছোঁয়া

‘‘প্ল্যানটা তখন থেকেই মাথার মধ্যে ঘুরছিল। কলকাতায় যদি ফিরতে হয় কখনও, তবে ওখানেও দক্ষিণী— মূলত, সমুদ্র তীরের খাবারের চল শুরু করব।’’

যেমন ভাবা তেমন কাজ। কলকাতায় রজনী সেন লেনে (মুদিয়ালির কাছে)পছন্দ হল জায়গা। সেখানেই ২৬ সিটারের রেস্তরাঁ তৈরি করেছেন ঈশানী। নকশাদার কাঠের চেয়ার-টেবিলে সুসজ্জিত রেস্তরাঁয় মেলে কোস্টাল খাবারের হরেক পদ। ‘অথেন্টিক’ কি? প্রাদেশিক রান্নার ক্ষেত্রে ঠিক যে প্রশ্নটা আমাদের মাথায় প্রথমেই ঝিলিক দেয়, ঠিক যে প্রশ্ন এখনই আপনি ঝালিয়ে নিচ্ছেন মনে মনে, তার ব্যাখ্যাও রয়েছে ঈশানীর কথায়।

‘‘অথেন্টিক তো সেটাই যাতে কেউ প্রথম থেকেই অভ্যস্ত। একই পরিবারের মা-বউয়ের হাতে একই খাবার এক এক রকম স্বাদের হয়ে ওঠে, কেবল মশলার পরিমাণ ও সামান্য হাতযশের এদিক-ওদিকে। আমার রেস্তরাঁর অথেন্টিসিটিও তেমনই। দক্ষিণী ঘরের বউ হিসেবে যে যে রান্নার স্বাদ চেখেছি, তাদেরই অবাধ যাতায়াত আমার রেস্তরাঁর রান্নাঘরেও। তবে তা একেবারেই কলকাতার ভোজনরসিকদের জিভের তাড় মেনে।’’

আরও পড়ুন: চিংড়ি ছাড়া পুজো জমে না কি?​

এ কথায় যে ভুল নেই তার প্রমাণ এখানকার ‘প্রন বাটার-গার্লিক’ বা ‘মাটন ধোসা’। এই রেস্তরাঁয় তেল-মশলা কম। আদর-আপ্যায়ন বেশি। কারি পাতার স্বাদ ভাল লাগে না বলে যাঁরা দক্ষিণ ভারতকে পাতে ব্রাত্য করে রেখেছেন এত কাল, তাঁদের স্বাদকোরককে নতুন অভি়জ্ঞতা দেবে ‘সারফিরে, দ্য কোস্টাল কাফে’।

চিকেন-মাটন পছন্দ নয়? পরোয়া নেই! আপনার জন্য কোস্টাল ঝড় আনবে ‘পটেটো টর্নেডো’। টর্নেডো-ই বটে। সাধারণ আলু ভাজা যে এত লোভনীয় ও দৃষ্টিনন্দন হতে পারে, এ পদ না চাখলে বুঝতেই পারবেন না। অদ্ভুত কায়দায় কাটা গোল গোল আলু আর লম্বা একটা কাঠি— প্লেটে চেপে এলে মনে হয়, ঝালরের মতো দেখতে পদখানি কলকাতার রসনাকে আরও একটু বোহেমিয়ান করে তুলবে বইকি!

কথায় কথায় জানা গেল এই রেসিপির গোপন কথাও।

পদ: পটেটো টর্নেডো

উপকরণ: আলু, গোলমরিচ, গরম মশলা, লঙ্কাগুঁড়ো, স্বাদ অনুযায়ী নুন, কর্ন ফ্লাওয়ার, রাইস পাউডার, চিজ/টম্যাটো সস।

প্রণালী: স্পাইরাল কাটার দিয়ে গোলাকার করেআলু কেটে নিন। স্পাইরাল কাটার নেই? বেশ তো, খুব সরু করে গোল গোল আকারে কেটে নিন তা। এ বার তাতে ১/২ টেবল চামচ কর্ন ফ্লাওয়ার, এক চামচ রাইস পাউডার, স্বাদ অনুযায়ী লঙ্কাগুঁড়ো, গরম মশলা, গোলমরিচ ও স্বাদ অনুপাতে নুন মেশান। এ বার ৬ ইঞ্চি লম্বা কাঠিতে আলু ভরে ডিপ ফ্রাই করুন। গলানো চিজ বা টম্যাটো সসের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

রেস্তরাঁ যে প্রদেশেরই হোক, মেছো বঙালির মন কি শুধু মাছের স্বাদই খোঁজে? তাঁদের জন্যও সহজ সমাধান রয়েছে সারফিরেতে। রেস্তরাঁয় খেয়ে আসার পর যদি বাটার গার্লিক প্রন বাড়িতেও বানাতে মন চায়, তা হলে দেখে নিন কী ভাবে বানাবেন তা।

পদ: বাটার গার্লিক প্রন

উপকরণ: ২০০ গ্রাম চিংড়ি, ৫০ গ্রাম মাখন, নুন, ২ চামচ কুচনো রসুন, এক চিমটে সাদা গোলমরিচ, লেবুর রস

প্রণালী: একটি পাত্রে মাখন নিন। এ বার এতে কুচনো রসুন কড়া করে ভোজে নিন। তুলে রাখুন পাত্রে। যাঁরা কাঁচা মাছ সরাসরি রান্নায় দিতে পছন্দ করেন না, তাঁরা খুব হালকা করে মাখনে নেড়েচেড়ে নিন চিংড়ি মাছটাও। এ বার একটু সাদা গোলমরিচ যোগ করুন এতে। স্বাদ অনুযায়ী নুন যোগ করুন। তত ক্ষণই নাড়ুন যত ক্ষণ মাখন ও রসুনের গন্ধ ছেড়ে যায়। এ বার নামানোর আগে লেবুর রস ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

‘সারফিরে’-র এ সব পদ না হয় পুজোর সময় ট্রাই করলেন বাড়িতেই। কিন্তু যাঁরা পুজোয় রান্নার পাট চুকিয়ে দিনভর টো টো কোম্পানিতেই ভরসা করবেন বলে ঠিক করেছেন, তাঁদের জানাই, পুজোর সময় সারফিরে খোলা থাকছে ভোর ৪টে থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। কাজেই আপনার সারা দিনের খাওয়াদাওয়ার জন্য এদের উপর নির্ভর করতেই পারেন। এই দুই পদ ছাড়াও ভাল লাগবে আপ্পাম, কারুভাপিল্লাই চিকেনও। দক্ষিণে রাস্তার ধারে ধারে যে চিকেন ভাজা সহজেই মেলে, তাকেই আপনার কলকাতার পাতে তুলে আনছে এরা। যদি মাটনে নতুনত্ব আনতে চান, তা হলে মাটন ধোসা খেয়ে দেখুন এখানকার। দক্ষিণী নিয়মে ধোসার সাম্বার আর ভাতের সাম্বারে যে আকাশপাতাল তফাত— তা বুঝবেন এখানে ঢুঁ মারলেই।

তা হলে আর দেরি কেন? প্রিয়জনকে নিয়ে পুজোর মাঝেই চলে আসুন এখানে। দু’জন খেতে খরচ পড়বে করসমেত ৫০০-৬০০ টাকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE