Advertisement
bamboo

বাঁশের ভিতর ফুটছে মাংস মেশানো ভাত! রেসিপি?

শহর কলকাতায় বসে সহজেই কিন্তু বানিয়ে ফেলা যায় এই পদ। এমনকি ফ্ল্যাটবাড়িতে বসেও।

সুমেরু মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৬:০২
Share: Save:

আজকাল কলকাতার কিছু কেতাদুরস্ত হোটেলে ‘বাম্বু চিকেন’ সার্ভ করা হলেও তা যথার্থ বাঁশপোড়া চিকেন নয়, রান্না করা চিকেন পোড়ানো বাঁশে পরিবেশন করেই কলার তুলছেন তাঁরা। অথচ শহর কলকাতায় বসে সহজেই কিন্তু বানিয়ে ফেলা যায় এই পদ। এমনকি ফ্ল্যাটবাড়িতে বসেও।

এর জন্য লাগে জাওয়া বাঁশ। এই বাঁশের বেড় হয় খুব চওড়া। সাধারণত নেওয়া হয় দুইটি গাঁট। একটি ভেঙ্গে ফেলা হয় ভিতরে লোহার শাবল ঢুকিয়ে। এ বার লাগবে সিমেন্টের টব আর কাঠ কয়লা। একটা জাওয়া বাঁশের দাম ২৫০টাকা যা দিয়ে ১০/১২ পিস বার হবে রান্নার উপযোগী পাত্র। মুরগি টুকরো করে ম্যারিনেট করে রাখুন ইচ্ছা মতো মশলা ও প্রয়োজন মতো লবণ ও তেল দিয়ে। কাঠকয়লা শহরে ৪০/৫০টাকা প্রতি কিলো। যা দিয়ে আধঘণ্টা আপনার সুন্দর আগুন থাকবে। অনেক ক্ষণ আঁচ থেকে যায় তার পরেও, শুধু খেয়াল রাখবেন বাঁশে যেন আগুন না ধরে যায়। বাঁশের গা দিয়ে সামান্য জল গড়িয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন।

বাঁশের মধ্যে মাংস মশলা ভরে বাঁশের খোলা মুখ কলাপাতা বা কচুপাতা দিয়ে বন্ধ করে দিন। কার্শিয়াং পাহাড়ে লেপচা, ভুটিয়া বা ওয়াচিপারা বাঁশের মুখে দুধেল পাতা ব্যবহার করে যা থেকে নাকি দুধ বার হয়— আমাদের অত ঝক্কি পোহাতে হবে না। যা পাওয়া যায়, তাতেই চলবে। আধঘণ্টা সময়ে মাংস রান্না হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা রাঁধব বাঁশ পোড়া পলান্ন বা আর্বান ‘বাম্বু মিট রাইস’ ।

আরও পড়ুন: পেঁয়াজ-রসুন ছাড়াই বানিয়ে ফেলুন এই কাশ্মীরি মাটন রেসিপি!​

প্রযুক্তি

একটা মাটির জালা দরকার। বাজারে গিয়ে বড় গলা দেখে একটা জালা কিনে আনুন। লাগবে লোহার নেট যা প্লাস দিয়ে বাঁকিয়ে আপনাকে একটা থাম মতো বানাতে হবে। এর মধ্যেই থাকবে বাঁশগুলো আর বাইরে আগুন, কাজেই বাঁশে আগুন ধরে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকবে না। এই পুরো ব্যাপারটা ঘটবে মাটির জালার মধ্যে। কাজেই যখন জালা কিনবেন বা নেটের খাঁচা বানাবেন তার আগেই বাঁশ কিনে চার টুকরো করে কেটে সঙ্গে নিয়ে যান। খেয়াল রাখবেন এই রান্নাটা যেন এক বারেই সম্পন্ন হয়।

আরও পড়ুন: পুজোর আড্ডায় পাতে থাকুক শামি কাবাব! বাড়িতেই বানান এই উপায়ে

প্রণালী

মুরগির মাংস ছোট টুকরো করে ধুয়ে নুন ও হলুদ নাখিয়ে রাখুন। এর মধ্যে দই, আদা ও রসুন বাটা ও গরম মশলার গুঁড়ো ও তেল দিয়ে ভাল করে মাখুন। পেঁয়াজ ছোট টুকরো করে নিন ও আঙুর মিশিয়ে রাখুন। অন্য পাত্রে চাল ধুয়ে আধ ঘণ্টা জল খাইয়ে বাড়তি জল ফেলে দিন। এর মধ্যে তেজপাতা, বড় এলাচ ও দুধ ঢেলে রাখুন। বাঁশে ভরার সময় এক বার মাংস আর এক বার চাল ভরতে থাকুন। প্রতিটি বাঁশে ৪০% -র বেশি ভর্তি করবেন না। ভাত রান্না হওয়ার পর তা হলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে।আলাদা করে এতে কোনও জল দেবেন না বাঁশের রসে এই ভাত রান্না হবে। মুখ পাতা দিয়ে বন্ধ করে নেটের মধ্যে করে জালার ভিতরে কাঠকয়লার আগুনে দিন। খুব ধীরে ধীরে এই রান্না চলবে। বাঁশের মধ্যে টগবগ করে রান্না হওয়ার শব্দ শুনতে পাবেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা চলবে এই রান্না তবে মাটিতে গর্ত করে করলে আধ ঘণ্টায় রান্না শেষ হয়ে যায়।

কী ভাবে বুঝবেন রান্না শেষ হয়েছে?

যত ক্ষন পর্যন্ত বাঁশের গায়ে ভারী কিছুর আঘাত করলে ফাঁপা শব্দ আসবে ততক্ষণ চলবে এই রান্না। রান্না শেষ হলে আর ফাঁপা শব্দে কানে আসবে না।বাঁশ চিরে ভেতরের রান্না হওয়া পলান্ন বার করে আনুন একটা বড় কলাপাতার উপরে, বাঁশপোড়া গন্ধ আপনাকে আকুল করে তুলবে। এটা পরিপূর্ণ আহার, কাজেই স্যালাড, রায়তা বা আচার ছাড়া অন্য কিছু এর সঙ্গে পরিবেশন করবেন না। এটা লেপচা ট্র্যাডিশনাল খাবার ‘পো পতেক্কা থাপনা’। কাজেই এর ট্র্যাডিশনাল স্বাদ যাতে বজায় থাকে, সেই দিকে খেয়াল রেখেই এই রান্না করা উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE