Advertisement
Healthy Living Tips

হাঁপানির সমস্যা রয়েছে? পুজোয় কী কী মানতেই হবে

হাঁপানি হল ডায়াবিটিস বা হাই ব্লাড প্রেশারের মত অসুখ, যা সারে না, কিন্তু সঠিক চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২০ ১৩:১৫
Share: Save:

চিকিৎসকদের আবেদন পুজোর বাজারই হোক বা প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখা এ বছরের জন্য বন্ধ থাক। বিশেষ করে যাঁদের হাঁপানি ও অন্য ফুসফুসের অসুখ আছে তাঁদের কোনও মতেই ভিড়ের মধ্যে যাওয়া চলবে না। এর ফলে একদিকে হাঁপানির আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ হলে এঁদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

নিরাপদে পুজো কাটাতে ভিড় এড়িয়ে চলার পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি বলে পরামর্শ দিলেন বললেন পালমোনোলজিস্ট অশোক সেনগুপ্ত। ঋতু পরিবর্তনের এই সময় হাঁপানির প্রকোপ বাড়ে। দূষিত বাতাস, ফুলের রেণু, ধোঁয়া, ধুলো, ফোড়নের তীব্র গন্ধ সবই হাঁপানি বাড়িয়ে দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে পৃথিবীর প্রায় ৩৩ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষ হাঁপানির শিকার। চিকিৎসার অভাবে পৃথিবীর ২ কোটি ৪৮ লক্ষ মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না ( ডিসএবিলিটি অ্যাডজাস্টেড লাইফ ইয়ার)।

সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করে ও কিছু নিয়ম মেনে চললে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করা যায় সহজেই, জানান অশোক সেনগুপ্ত। বাড়ির মধ্যে এবং বাইরের কিছু অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী জিনিস থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন অশোক বাবু। তোষক বা বিছানার চাদরে ধুলো, ঘরের ঝুল, কার্পেট বা আসবাবপত্রের ধুলো এবং রান্নায় লঙ্কা বা অন্যান্য ফোড়নের গন্ধ, সিগারেট ও গাড়ির ধোঁয়া, পোষা পশুপাখির লোম, ফুলের রেণু থেকেও হাঁচি কাশি ও অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি ও তা থেকে অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই এ সব জিনিসের থেকে দূরে থাকতে হবে।

আরও পড়ুন: করোনা থেকে সেরে উঠেছেন? পুজোর সময় কী কী খেয়াল রাখবেন?

নিরাপদে পুজো কাটাতে ভিড় এড়িয়ে চলার পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি ।

বাচ্চাদের মধ্যে অ্যালার্জির কারণে হাঁপানির প্রকোপ খুব বেশি, বললেন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ পল্লব চট্টোপাধ্যায়। তাই এই সময়ে ভিড়ের মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া অনুচিত। ৩ বছরের বেশি বয়সের বাচ্চাদের মাস্ক পরিয়ে বাইরে নিয়ে যেতে হবে। খেলার মাঠ বা পার্কে যেতে পারে, কিন্তু ভিড়ে যাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। পুজোর দিনে ভিড় না থাকলে পাড়ার ঠাকুর দেখিয়ে আনতে পারেন কিন্তু ভিড়ের মধ্যে ঠাকুর দেখতে যাওয়া মানা, বললেন পল্লব চট্টোপাধ্যায়।

বাচ্চাদের বারে বারে সর্দি কাশি হলে হাঁপানি আছে কি না দেখতে হবে। অনেকের কাশতে কাশতে চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই আওয়াজ আর শ্বাসকষ্ট এই রোগের এক অন্যতম লক্ষণ। রাতে কাশি ও শ্বাসকষ্ট বাড়ে। খাবার খেতে অসুবিধা হয়ে বমি হয়ে যেতে পারে। সামগ্রিকভাবে অসুস্থ লাগে।

ভাইরাল জ্বর-সহ সংক্রমণ হলে সমস্যা আরও খারাপ হতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে অবিলম্বে ইনহেলারের সাহায্যে রোগের লক্ষণ কমানো দরকার, পরামর্শ চিকিৎসকদের। যাঁরা ইতিমধ্যে অ্যাজমায় আক্রান্ত, তাঁরা অবশ্যই ট্রিগার ফ্যাক্টর থেকে দূরে থাকুন। যে সব কারণ হাঁপানির আক্রমণ বাড়ায় তাদের বলে ট্রিগার ফ্যাক্টর। যেমন দূষিত পরিবেশ হাঁপানি সংক্রান্ত অ্যাটাক বাড়িয়ে দেয়। আবার ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি-জ্বর বা অন্যান্য ভাইরাসের সংক্রমণ হলে হাঁপানির প্রবণতা বাড়ে।

ভাইরাল জ্বর-সহ সংক্রমণ হলে অবিলম্বে ইনহেলারের সাহায্য নিন।

কোভিড-১৯ সংক্রমণে হাঁপানির রোগীদের শ্বাসকষ্টের প্রবণতা বেড়ে যায়। গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স বা অ্যাসিডিটি হলে হাঁপানির কষ্ট বাড়ে। তাই পুজোর সময় মশলাদার ভাজাভুজি খাবার না খাওয়াই ভাল। বিশেষ করে এ বারের কোভিড অতিমারির সময় একটু বুঝে চলা উচিত, পরামর্শ অশোকের।

আরও পড়ুন: পুজোর সময় রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে এই সব মানতেই হবে

অনেক সময় অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম করলে হাঁপানির টান ওঠার ঝুঁকি থাকে। এর ডাক্তারি নাম ‘এক্সারসাইজ ইনডিউজড অ্যাজমা’। হাঁপানি হলে ইনহেলার দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। বিশেষ ডিভাইসের সাহায্যে ইনহেলার দিলে দ্রুত রোগের উপশম হয়, বললেন অশোক বাবু।

বাচ্চাদের ইনহেলার দিতে অনেকেই ভয় পান। ওষুধের থেকে ইনহেলার অনেক বেশি কার্যকর। কারণ ইনহেলারের সাহায্যে ওষুধ নিলে তা সরাসরি শ্বাসনালিতে পৌঁছে যাওয়ায় রোগী দ্রুত আরাম পায়। দু-রকম ইনহেলার ব্যবহার করা হয়। রিলিভার অর্থাৎ কাশি ও শ্বাসকষ্ট দ্রুত কমানোর জন্যে ইনহেলার দেওয়া হয়। অ্যাজমার অ্যাটাক চলে যাওয়ার পর আপাত দৃষ্টিতে অসুখটা আর নেই মনে হলেও আবার যে কোনও সময়েই ফিরে আসতে পারে। আবার যাতে অ্যাটাক না হয়, তার জন্যেই প্রিভেন্টিভ ইনহেলার নেওয়া দরকার।

আরও পড়ুন: অন্য রকম শারদীয়ায় এই সব মানলেই মন ভাল, নিরাপদে কাটবে পুজো

এ ছাড়াও ট্রিগার ফ্যাক্টর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে। ঋতু পরিবর্তনের সময় জীবাণুদের বাড়বাড়ন্ত বা পরিবেশ দূষণ। এই কারণে প্রিভেন্টিভ ইনহেলার ব্যবহার করে যাওয়া দরকার। স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনেকে ভয় পান। জেনে রাখুন অ্যাজমার চিকিৎসায় কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। এগুলি আমাদের শরীরের জন্যে মোটেও ক্ষতিকর নয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করতে হয়। যে সব বয়স্ক মানুষ হাঁপানিতে ভুগছেন, তাঁদের প্রত্যেকের উচিত বাধ্যতামূলকভাবে নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নেওয়া।

ট্রিগার ফ্যাক্টর থেকে সুরক্ষিত থাকতে প্রিভেন্টিভ ইনহেলার ব্যবহার করুন।

হাঁপানির সঙ্গে নিউমোনিয়া হলে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। টিকা নেওয়া থাকলে ভয় থাকে না। অশোক সেনগুপ্ত জানালেন, ভুললে চলবে না হাঁপানি হল ডায়াবিটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো অসুখ, যা সারে না, কিন্তু সঠিক চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রোগ প্রতিরোধে ট্রিগার ফ্যাক্টরগুলি থেকে দূরে থাকতে হবে। দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ হাঁপানির আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। মন ভাল রাখুন। শ্বাসনালি ও ফুসফুস ভাল রাখতে নিয়ম করে ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন। সারা বছরই হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। হাঁপানির পাশাপাশি কোভিড-১৯ ভাইরাসকে দূরে রাখুন। পুজো হোক নিরাপদ, হেঁটে নয় নেটে ঠাকুর দেখুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE