কয়েক দিনের আনন্দ শেষ। এ বার উমাকে বিদায় জানানোর পালা। করোনা আবহেও উৎসবের রেশটুকু মেখে মন ভাল করার পালা যেন আচমকাই শেষ হয়ে গেল। নবমীর ভোর হতেই শরতের আকাশে বিষণ্ণ আলো ছড়িয়ে পড়েছে আজ। মনের ঢাকে বিষাদকাঠি। মর্ত্যভূমে বাপের বাড়ি ছেড়ে উমা চললেন কৈলাসের পথে। তাঁকে বিদায় জানানোর প্রথায় ঢাকের বাদ্যি, ভাসানের নাচ। ধুনুচি নাচ, ঢাকের বাদ্যির তালে পা মেলানো কাঁধে কাঁধ রেখে, এ জাতীয় আনন্দ তো প্রতি বছর হয়। কিন্তু এ বছর কি চেনা প্রথায় ভাসান?
ভাসান অর্থাৎ প্রতিমা নিরঞ্জন। একই ঘাটে অনেক প্রতিমাকে ঘিরে লোকের ভিড়। অনেকগুলো ক্লাব কিংবা বাড়ির পুজো। প্রতি বারের চেনা ছবিটা এমনই। কিন্তু সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে, মাস্ক পরে, স্যানিটাইজেশন সত্ত্বেও কি ভিড় ঠেকানো সম্ভব?
প্রশাসনের তরফে প্রতিমা নিরঞ্জনের নির্দিষ্ট নিয়মের কথা বলা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের তরফে বলেই দেওয়া হয়েছে, মণ্ডপ থেকে সোজা ঘাটে গিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন করতে হবে। তিন দিন প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য ধার্য করা হয়েছে এবং সেটি এলাকাভিত্তিক। সে ক্ষেত্রেও ভিড়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: করোনা থেকে সেরে উঠেছেন? পুজোর সময় কী কী খেয়াল রাখবেন?
উদ্যোক্তাদের দাবি, আদালতের নির্দেশের পর এ বার কারা পুজো দেখতে বেরোন, সে দিকে নজর ছিল। ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী পর্যন্ত ভিড়ের নিরিখে দেখা গিয়েছে, প্রায় সব মণ্ডপেই ২০ থেকে ৪৫ বছর বয়সিদের ভিড়। ৪৫-৬০ বছর বয়সির সংখ্যা হাতেগোনা। ৬০-এর উপরে দর্শনার্থী নেই বললেই চলে। কিন্তু ভিড় দেখে বয়স আন্দাজ করা মুশকিল। অল্পবয়সিদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে কি না, তা জানা নেই, তাই ভিড় করে পুজোর ভাসানে একেবারেই যাওয়া ঠিক না, এমনই জানান মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস।
এই বছর নিরঞ্জনে কোনওমতেই ভিড় করা যাবে না
পাড়ার পুজো কিংবা বাড়ির পুজোর ক্ষেত্রে ন্যূনতম লোক যাতে যায়, তা দেখতে হবে। কোনওভাবেই বয়স্ক লোকদের প্রতিমা নিরঞ্জনে যাওয়া ঠিক না। মাস্ক পরে থাকতে হবে। মানতে হবে সামাজিক দূরত্ববিধি। বাচ্চাদেরও এ বছর প্রতিমা নিরঞ্জনে নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়, পরামর্শ মেডিসিনের চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের।
জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর কথায়, ‘‘সবাই মিলে নাচতে নাচতে ভাসানে যাওয়ার প্রশ্নই নেই এ বছরে। পরিবারের বয়স্কদের বদলে অল্পবয়সিরাই গেলে ভাল। নিরঞ্জনে ন্যূনতম লোকের অংশগ্রহণই কাম্য।ডায়াবিটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে বাড়ি থেকে একেবারেই বেরনো উচিত নয়, এ বছরের পুজোটা যে অন্য রকম, সেটা বোঝাতে হবে প্রবীণদের।’’
আরও পড়ুন:করোনা আবহে সিঁদুর খেলে দেবীবরণ? কী বলছেন চিকিৎসকরা
সুবর্ণ কয়েকটি বিষয়ে নজর রাখতে বলেছেন, যেমন-
১. একই ট্রাক বা টেম্পোতে একাধিক জন না উঠে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ানো
২. সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিসর্জনের সময় বাড়িয়ে দিলে সে ক্ষেত্রে ভিড়ের আশঙ্কা কমবে।
৩. উদ্যোক্তাদের তরফে নিরঞ্জনে কত জন যাবেন, সেই সংখ্যা প্রশাসন বেঁধে দিতে পারলে ভাল। নইলে উদ্যোক্তাদেরই উদ্যোগী হয়ে যতটা সম্ভব কম লোক যাতে নিরঞ্জনে থাকেন তা দেখতে হবে।
৪. ছোট প্রতিমার ক্ষেত্রে কম লোক লাগবে নিরঞ্জনে, বড় প্রতিমার ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি, সেই বুঝে পুলিশ ও পুরসভাকে সহায়তা করতে হবে বলেও জানান এই চিকিৎসক।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, উৎসবের আনন্দ হোক বাড়ির ঘেরাটোপে। আড়ম্বর বা ভিড় একেবারেই কাম্য নয়। আগামী বছরের দুর্গাপুজোয় যেন সবাই মিলে আনন্দ করতে পারেন, সে কথা মাথায় রেখেই এ বছর উৎসবের আনন্দে লাগাম টানুন। সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে, মাস্ক পরে সুস্থ থাকুন। ভাল থাকুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy