সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। পাল্টায়নি শুধু দুর্গা পুজো নিয়ে আবেগ, অনুভবের ছবিটা। ফি বছর বিসর্জনের লগ্নে যেন একটা সব হারানোর ব্যথা ঘিরে ধরে- বুকের ভিতর শূন্যতা, ঢাকের বোলে বিদায়ের সুর, সিঁদুরখেলার হুল্লোড়ের শেষে চোখ ছলছল, আলোয় ভেসে যাওয়া বিসর্জনের শোভাযাত্রার পরে ফাঁকা প্যান্ডেলের নিঝুম পড়ে থাকা।
এই রিক্ততা, মন খারাপ থেকে আমাদের বার করে আনার জন্যই বোধহয় আসে বিজয়া। আত্মীয়-স্বজনের জমায়েত, প্রণাম, আলিঙ্গন, মিষ্টিমুখ মনের মেঘ কাটিয়ে দেয় অনেকটাই। এ বছর অবশ্য সবটাই অন্যরকম। বিজয়ার চেনা ছবিটাও কি তবে বদলে ফেলতে হবে? পরামর্শ দিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী।
১) দশমীর অন্যতম আকর্ষণ মা দুর্গার বরণের পরে সিঁদুরখেলার হইচই। করোনার জেরে যে সব বিধিনিষেধ আমাদের মেনে চলতে হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হল শারীরিক দূরত্ব বা ফিজিক্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখা। কিন্তু পরস্পরকে না ছুঁয়ে তো সিঁদুরখেলার আচার পালন সম্ভব নয়। বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে এ বারকার মতো সিঁদুরখেলা স্থগিত রাখা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: চিনে নিন চিনি-র কামাল! ফিরবে ত্বকের জেল্লা
ভিডিও কলেই হোক এবারের বিজয়া
২) প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা বাড়ির বারান্দা বা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দেখা একটা অভিজ্ঞতা। কিন্তু এমন ভিড়, জমায়েত এখনকার সময়ের প্রেক্ষিতে একেবারেই বর্জনীয়। “তাই এ বারের মতো মা কে দূর থেকেই বিদায় জানান। আপনি কো-মর্বিড হোন বা না হোন, কোনও রকম সমাবেশে অংশগ্রহণ করা কিছুতেই কাঙ্ক্ষিত নয়। পুজো বছরে এক বারই আসে- মনে মনে এই যুক্তি খাড়া করে নিজেকে বেসামাল হতে দেবেন না,” বলছেন চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী।
৩) যে কোনও উৎসব, উদযাপন আমাদের আরও কাছাকাছি আনে। একত্র হওয়া যে কোনও আনন্দকে বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়, মনের ক্ষতেও পড়ে প্রলেপ। কিন্তু পরিস্থিতিই এমন দুর্যোগের, পরস্পরের সান্নিধ্যের ওমটুকু হয়ে উঠেছে দুষ্প্রাপ্য। তাই বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম নয়, এ বছর শ্রদ্ধা জানান অন্তত ছ'ফুট দূরত্ব রেখে। ছোটদের বুকে জড়িয়ে ধরা বা বন্ধুজনের আলিঙ্গনও পরের বারের জন্যই তোলা থাক। কাছাকাছি আত্মীয়পরিজন, বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি একবারও না গেলে যদি মন উচাটন হয়, তবে যান। কিন্তু স্নেহ-শ্রদ্ধা-প্রীতি সবই হোক নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। আগে দূরে থাকা প্রিয়জনদের সঙ্গে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় হত চিঠিতে। হালের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভার্চুয়াল দুনিয়া গোটা পৃথিবীকে বানিয়ে ফেলেছে গ্লোবাল ভিলেজ। ফোন, মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপ, ইমেল, ফেসবুকেই হোক না এ বারের বিজয়া?
প্রিয়জনের পছন্দসই মিষ্টি, চকোলেট অর্ডার করে পাঠান তাঁদের বাড়িতে
৪) বিজয়া মানেই তো মিষ্টিমুখ। নিজের মানুষদের মিষ্টি, চকোলেট, কেক এবং আরও হরেক রকম ভুরিভোজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে মন চাইছে না? দরকারও নেই। অনলাইন ডেলিভারি তো রয়েছেই মুশকিল আসান। প্রিয়জনের পছন্দসই খাবার অর্ডার করে পাঠান তাঁদের বাড়িতে। বাক্স খোলার আগে স্যানিটাইজ করে নিতে বলার কথা ভুলবেন না যেন।
মন ভাল রাখুন। বিষাদকে জিতে যেতে দেবেন না। এটাই কিন্তু শেষ পুজো নয়। আসছে বছর আবার হবে। তাই অতীতের আনন্দ-আদর-হল্লাহাটির গন্ধটুকু মেখে নিয়েই বরং কাটিয়ে দিন এ বারের বিজয়া। সুস্থ থাকুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy