Advertisement
Kali Puja 2020

পুজোর পরে রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে দৈনিক ডায়েটে থাক ফল

আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ৭০–৭৫ শতাংশ আসে আমাদের প্রতিদিনের খাবার থেকে।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৩৪
Share: Save:

এ বারের পুজো একেবারে অন্য রকম- নানা বিধিনিষেধের মধ্যে এখন দিনযাপন। তবে বাড়িতে বসেও পুজোর আনন্দে বিশেষ ঘাটতি পড়েনি। অনলাইন ডেলিভারিতে রেস্তোরাঁর খাবার খেয়ে, দু’চার জন বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিয়ে পুজোয় আনন্দ কড়ায় গণ্ডায় উসুল করা গিয়েছে পুরোদমে। কিন্তু এ দিকে দৈনিক কোভিড সংক্রমণ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তাই মাস্ক ও হাত ধোওয়ার বিধি মেনে চলার পাশাপাশি সঠিক ডায়েট ও নিয়মিত আসন করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলুন।

ডায়েটিশিয়ান ইন্দ্রাণী ঘোষ জানালেন, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ৭০–৭৫ শতাংশ আসে আমাদের প্রতিদিনের খাবার থেকে। রোজকার খাবারে তাই ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম এবং উচ্চ মানের প্রোটিন থাকা দরকার। ইন্দ্রাণীর মতে, সুষম খাবার মানেই তাতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল ও ট্রেস এলিমেন্ট থাকে। “অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসে ভরপুর নানা রকম ফল রোজকার ডায়েটে থাকলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হয়,” বলছেন তিনি।

কোভিড ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভিটামিন সি অত্যন্ত কার্যকরী। সরবতি লেবু, কমলা লেবু, বাতাবি লেবু জাতীয় যে কোনও ফল রোজ খেতে পারলে কোভিড ১৯-সহ অন্যান্য জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়া অনেক সহজ হয়। সরবতি লেবুতে ভিটামিন সি ছাড়াও ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিনয়েড, ফ্ল্যাভোনয়েড, লিমোনিনয়েডস-সহ বেশ কিছু পলিফেনল থাকে। এর সব ক’টিই বিভিন্ন রোগ আটকে দিতে পারে। তবে চিনি দিয়ে রস করে নয়, চিবিয়ে খেলে বেশি উপকার পাবেন বলে পরামর্শ দিলেন ইন্দ্রাণী। ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, হজমের সমস্যা, ব্লাড প্রেশার-সহ বিবিধ রোগ প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় সরবতি লেবু। কমলালেবুর ফ্ল্যাভোনয়েডস, লিমোনিনয়েড, ক্যারোটিনয়েডস জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে কার্যকর ভূমিকা নেয়। ব্রেস্ট ক্যানসার-সহ নানা ক্যানসার প্রতিরোধ করার পাশাপাশি তা চোখও ভাল রাখতে পারে। এ ছাড়া, আপেল, বেদানা, পেয়ারা, কলার মতো দৈনিক ২/৩ টি গোটা ফল খেলে ভাল হয়। সকালের জলখাবারে কলা বা আপেল, মধ্যাহ্নভোজের আগে লেবু, বিকেলে পেয়ারা- এই নিয়মে খাওয়া যেতে পারে। কিংবা সব ফল টুকরো করে কেটে একসঙ্গেও খাওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন: উৎসবে চাই জেল্লা, এই সব্জিতেই চমক ফেরান ত্বকের

রোজকার ডায়েটে থাকুক নানা রকম ফল

ডায়েটিশিয়ান রেশমি রায়চৌধুরী জানালেন, ফলের পাশাপাশি রোজ নিয়ম করে দুধ, বাড়িতে পাতা দই, ছানা খেতে পারলে ভাল। তবে ল্যাকটোজ অ্যালার্জি থাকলে সয়াবিনের দুধ বা টোফু খাওয়া উচিত। দুপুরে বা রাত্রে অল্প করে বাড়িতে পাতা দই বা সকালের জলখাবারে পরে দইয়ের ঘোল খেলে ভাল হয়। দই দিয়ে রায়তা বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে। ডিমের ক্ষেত্রে অনেকে কুসুম বাদ দিয়ে খান, কিন্তু ডিমের কুসুমে থাকে ভিটামিন এ-সহ বিভিন্ন খনিজ। কিডনির অসুখ বা অ্যালার্জির সমস্যা না থাকলে নিয়ম করে একটি ডিম সেদ্ধ বা পোচ খাওয়া যেতে পারে।

ফলের মতোই সবজিও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। দুপুরের খাবারে ভাত বা রুটির সঙ্গে ডাল, মাছ বা চিকেন আর ৩/৪ রকম সবজি খেলে ভাল হয়। কুমড়ো, ঢ্যাঁড়স, পটল, ঝিঙে, বাঁধাকপি সব সবজিতেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস ও ফাইবার আছে। সপ্তাহে দু’তিন দিন কলমি শাক, নটে শাক, লাউ বা কুমড়ো শাক খান। শাকের ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। টোম্যাটোর লাইকোপিন আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। নটে শাক, কলমি শাক, কুমড়ো, উচ্ছে, পটল, ঝিঙে, বরবটি- এই মরসুমে বাজারে যে সব সবজি পাওয়া যায়, সবগুলিই কিন্তু আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে পারে। শীত আসছে, এই সময়টায় হরেক রকম রঙিন শাকসবজি পাওয়া যাবে। বিট, গাজর, মেথি শাক, কড়াইশুঁটি রাখুন রোজকার সবজি বাজারে। বিকেলের জলখাবার হিসেবে কল বেরনো ছোলা বা গোটা মুগ, পেঁয়াজ, পাতিলেবু, লঙ্কা মিশিয়ে চানা বানিয়ে খেতে পারেন। পুষ্টির খনি হল কল বেরনো শস্যদানা। পেঁয়াজ, লঙ্কা, আদাকুচি, বাদাম দিয়ে বানানো ঝালমুড়িও বিকেলের জলখাবার হিসেবে অত্যন্ত পুষ্টিকর।

ফলের পাশাপাশি নিয়ম করে খান দুধ, বাড়িতে পাতা দই, ছানা

আরও পড়ুন: উৎসবের মরসুমে রোগা হতে প্রোটিন শেক? বিপদ এড়াতে কী কী মানতেই হবে

আর মনে রাখবেন রাতের খাবার ৯টার মধ্যে খেয়ে নেওয়া উচিত। রাতে খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে না পড়বেন আর রাতে বেশি মশলাদার খাবার না খেলে হালকা রুটি তরকারি খেতে পারেন। সঙ্গে খান এক গ্লাস দুধ, যদি সহ্য হয়। সকালে খালিপেটে একটা গোটা পাতিলেবু রস এক গ্লাস জল দিয়ে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার হয়। পাতিলেবুতে থাকা ভিটামিন সি লিমোনিন, সাইটোস্টেরল গ্লাইকোসাইডস, ফ্ল্যাভনয়েডস-সহ নানা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস থাকে। এগুলি বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। তবে মন ভাল না থাকলে সবই বিফলে যাবে। তাই সুষম খাবার পাশাপাশি নিয়মিত এক্সারসাইজ ও প্রাণায়াম করতে হবে। আনন্দে থাকুন, ভাল থাকুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kali Puja 2020 Diet Tips Immunity Food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE