Advertisement
Durga Puja Celebration

বারান্দা-মণ্ডপে মুক্তি রূপে দেবী

মনোরোগ চিকিৎসককে ওই বধূ জানিয়েছিলেন, বারান্দায় দাঁড়ালে মন ভাল হয়ে যায় তাঁর।

কাশী বোস লেনে চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

কাশী বোস লেনে চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৮ ১২:০৭
Share: Save:

ইচ্ছে করে মরে যেতে। মনোরোগ চিকিৎসকের মুখোমুখি হয়ে এক গৃহবধূ জানিয়েছিলেন, গলায় ফাঁস দিয়ে বেশ কয়েক বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন তিনি। ব্যর্থ হয়েছেন। পরে নিজেদের চারতলা ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে ঝাঁপ দেওয়ারও চেষ্টা করেন। কিন্তু পারেননি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখেই সময় কেটে গিয়েছে তাঁর। আত্মহত্যা আর করা হয়নি।

মনোরোগ চিকিৎসককে ওই বধূ জানিয়েছিলেন, বারান্দায় দাঁড়ালে মন ভাল হয়ে যায় তাঁর। মৃত্যুর চিন্তা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। দিনের বেশ কিছুটা সময় ওই বধূকে বারান্দায় কাটানোর পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসক বারান্দায় বসেই তাঁর কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসক বলছিলেন, ‘‘খোলা আকাশ অনেকেরই মন ভাল করে দেয়। ওই বধূর বাঁচার ইচ্ছে ছিল। বারান্দা সেই ইচ্ছেটাকেই অনেকটা বাড়িয়ে দিত।’’ বারান্দাই ছিল তাঁর অক্সিজেন।

এই মন ভাল করা বারান্দাই চলতি বছরের পুজোর থিম উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেনে। মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে থাকা শিল্পী প্রদীপ দাস বলছিলেন, ‘‘আমরা থিমের নাম দিয়েছি ‘আমার অলিন্দে’। ইট-কাঠ-কংক্রিটের জঙ্গলের এই শহরে বারান্দা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। অফিসের কুঠুরিতে বসে বোঝাই যায় না কখন সন্ধ্যা হয়ে গেল। আমাদের মণ্ডপে এসে মুক্তির স্বাদ পাবেন দর্শনার্থীরা। পুজোর পাঁচ দিন আমাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে হয়তো বৃষ্টির জল তালুবন্দি করে মুক্তির স্বাদ খুঁজবেন অনেকে।’’ তিনি জানালেন, তিন মাস ধরে কাশী বোস লেনের ১০০ ফুট বাই ৮০ ফুট জায়গায় কাজ করছেন প্রদীপবাবু এবং তাঁর সহযোগীরা। মণ্ডপের বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, একে অপরের গায়ে লেগে যেন পরপর দাঁড়িয়ে কয়েকটি ছাদ। একটায় দাঁড়ালে সহজেই অন্যের নাগাল পাওয়া যায়। এমনই একটি ছাদ পেড়িয়ে প্রবেশ করতে হয় মণ্ডপে। এ বার চারপাশে একের পর এক বারান্দা। কোনও বারান্দায় পুরনো মডেলের গাড়ি দাঁড়ানো, তো কোথাও আবার দেওয়ালে টাঙানো সাইকেল। শিল্পী বলছিলেন, ‘‘বারান্দা তো পর্তুগিজ শব্দ। তবু বাঙালি একে আপন করে নিয়েছে। বাঙালির বারান্দাই দেখাব আমরা।’’

আরও পড়ুন: ৪০ ফুটের বড় দুর্গা এ বার পাঁশকুড়ার পুজোয়​

আরও পড়ুন: পুজোয় জাগে মানকর​

মণ্ডপের মাঝের অংশে ২৫ ফুট বাই ৩০ ফুট জায়গায় বসেছে ১৬ ফুট লম্বা প্রতিমা। প্রতিমা শিল্পী সনাতন দিন্দা বলছিলেন, ‘‘যুদ্ধের নয়। আমাদের প্রতিমা মুক্তির রূপে। অস্ত্রের ব্যবহার করছি না। ছ’টি হাতই উপরের দিকে তোলা। খোলা বারান্দায় যেন কোনও তরুণী মুক্তির আনন্দে নেচে বেড়াচ্ছেন।’’ পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সোমেন দত্ত জানালেন, এ বার তাঁদের পুজোর ৮১তম বর্ষ। মন ভাল করা থিম, সনাতনী প্রতিমার ছাড়াও থাকছে দশর্নার্থীদের জন্য বিশেষ কিছু চমক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE