Advertisement
Durga Puja Celebration

উচ্চারণ ও পুজোর পাঠ দিতে কার্তিকের প্রশিক্ষণ

এই উৎসবের মরসুমে ভক্তদের একটা বড় অংশেরই সংশয় থাকে, দেবী-আরাধনার রীতি বা মন্ত্র-পাঠে কোনও রকম ত্রুটি থাকছে না তো!

এথোড়া গ্রামে পৌরহিত্যের পাঠ দিচ্ছেন কার্তিকবাবু। ছবি: পাপন চৌধুরী।

এথোড়া গ্রামে পৌরহিত্যের পাঠ দিচ্ছেন কার্তিকবাবু। ছবি: পাপন চৌধুরী।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:০০
Share: Save:

মোটরবাইক থামল একটি দুর্গা মন্দিরের সামনে। মূর্তি তৈরি প্রায় শেষ। দেবী মূর্তির সামনেই শুরু হল পুজোর রীতিনীতি, সংস্কৃতের শুদ্ধ উচ্চারণের পাঠ-দান। পুজো যাতে নিয়ম-নিষ্ঠা মেনে হয়, এমন ভাবনা থেকেই এই মানুষটি প্রায় এক যুগ ধরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তিনি পাণ্ডবেশ্বরের কার্তিক মুখোপাধ্যায়।

বুধবার। সালানপুরের এথোড়া গ্রাম। সেখানেই এ দিন পৌরহিত্যের পাঠ দিতে এসেছেন কার্তিকবাবু। কিন্তু কেন এমন পাঠ দেওয়া? তাঁর সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, দিকে দিকে থিম-পুজোর রমরমা। চলে দেদার নিজস্বী তোলা, পুজোর আড্ডাও। কিন্তু এই উৎসবের মরসুমে ভক্তদের একটা বড় অংশেরই সংশয় থাকে, দেবী-আরাধনার রীতি বা মন্ত্র-পাঠে কোনও রকম ত্রুটি থাকছে না তো। এই বিষয়টি তাঁকেও ভাবিয়েছিল বলে জানান কার্তিকবাবু।

বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করেছেন আসানসোলের প্রবীণ সংস্কৃতিকর্মী নন্দদুলাল আচার্যও। তাঁর কথায়, ‘‘উৎসবের মরসুমে আড়ম্বর দেখা যায়। তাতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু নিয়ম-নিষ্ঠায় যেন কোনও রকম খামতি না থাকে, এটাও পুজোর আয়োজক থেকে পুরোহিত, সকলেরই দেখা উচিত।’’ এই বিষয়ে আক্ষেপ রয়েছে শহর-গ্রামের নানা প্রান্তের লোকজনেরও। বিষয়টি প্রায় ১২ বছর আগে ভাবিয়েছিল পেশায় ইসিএল কর্মী কার্তিকবাবুকেও।

আরও পড়ুন: শহর মেদিনীপুরের পুজোর আকাশে এ বার ‘মা’-এর ছড়াছড়ি!​

আরও পড়ুন: ভিড়ে চোখ টানতে ভরসা বুটিকের শাড়ি​

সেই মাঠে নামা। কার্তিকবাবু জানান, পুজোর বিধি কোনও ভাবেই ভুল হওয়াটা কাম্য নয়। মন্ত্রপাঠ হওয়া উচিত সংস্কৃত ব্যাকরণ মেনে। কার্তিকবাবুর পুরোহিত ছাত্রের সংখ্যাও ধীরে ধীরে বেড়েছে। কার্তিকবাবুই বলেন, ‘‘এ বছর পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া, সালানপুরের নানা এলাকায় অন্তত একশো জন পুরোহিত আমার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।’’ এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর্বে, বছর ৫২-র কার্তিকবাবুর সঙ্গী হন হুগলি ও আরামবাগের দু’জন। পৌরহিত্যের পাঠ নিতে এগিয়ে আসছেন তরুণ প্রজন্মও। এথোড়ায় গিয়ে দেখা গেলো সংস্কৃত অনার্সের ছাত্র অভিষেক চক্রবর্তী মন্ত্রোচ্চারণ শিখছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ঠিক সংস্কৃত উচ্চারণই এক জন পুরোহিতের মূল পরিচয়। তাই আগ্রহ নিয়ে শিখছি।’’ এথোড়া গ্রামেরই এক পুজোর উদ্যোক্তা শ্রীকান্ত মুখোপাধ্যায় জানান, সম্প্রতি সকলেরই দাবি থাকে, উপযুক্ত পুরোহিত যেন পুজোটা করেন। তাই এমন শিবিরের আয়োজন করা হয়।

এর জন্য নির্দিষ্ট কোনও পারিশ্রমিকের চাহিদাও নেই বলে জানা গিয়েছে। সংস্কৃত সাহিত্যে এমএ, বারাণসী থেকে ব্যাকরণের পাঠ পাওয়া বঙ্গীয় পুরোহিত সভার সদস্য কার্তিকবাবুর ধরাবাঁধা কোনও পারিশ্রমিক নেই। পাঠ নিতে আসা শিক্ষার্থীরা গুরুদক্ষিণা হিসেবে যা দেন, তাতেই চলে।

কার্তিকবাবুর স্ত্রী বর্ণালীদেবী, ছেলে, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র শূলপানিও এমন প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশে থেকেছেন। বর্ণালীদেবীর কথায়, ‘‘রীতি মেনে পুজোর জন্য উনি এই কাজ করছেন। তাই সবসময় তাঁকে উৎসাহ দিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE