Advertisement
Durga Puja Celebration

সিঁদুর খেলবেন তরুণী, সঙ্গে থাকবেন স্ত্রী

এ বছরের পুজো একটু আলাদা। প্রথম সিঁদুর খেলবেন সুচন্দ্রা। না খেললেও সঙ্গে থাকতে পারেন তাঁর সঙ্গী শ্রীও! সম্পর্কে যিনি সুচন্দ্রার স্ত্রী।

সুচন্দ্রা ঘটক
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৮ ১১:০৫
Share: Save:

বিয়ে হয়েছে বছর চারেক। সেই থেকেই ইচ্ছে শাড়ি পরে, সেজেগুজে আর পাঁচ জন বিবাহিতা বাঙালির মতো বিজয়া দশমীটা উদ্‌যাপন করবেন। হয়ে ওঠেনি। তবে এই বার কোনও ভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। পুজোটা শ্রী ও তাঁদের পোষ্য বিড়াল রোমিয়োকে নিয়ে পাহাড়ে কাটাবেন। কিন্তু দশমীর সকালেই ফিরবেন কলকাতায়। সুচন্দ্রা দাস মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ওই দিনটা শহরে থাকতেই হবে। প্রথম বার পাড়ার মণ্ডপে গিয়ে ঠাকুর বরণ করার উত্তেজনাই আলাদা বলে মনে করেন মধ্য তিরিশের এই বধূ।

স্ত্রীর সিঁদুর খেলার ইচ্ছেটা পূরণ করার জন্য এই বছরটাই সবচেয়ে ভাল বলে মনে করেন শ্রীও। কিছু দিন আগেই সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা নিয়ে রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তাতে তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক কোনও ভাবে স্বীকৃতি না পেলেও অন্তত সমকামী সম্পর্কের প্রতি সামাজিক আচরণটা বদলানোর একটা ক্ষীণ আশা তৈরি হয়েছে। শ্রী মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘এই বছর আমাদের কেউ অপরাধী বলে মনে করাতে এলে অন্তত আইন দেখানোর সুযোগটা রয়েছে। এত দিন মনে একটু অস্বস্তি তো থাকতই।’’

কিন্তু তাঁরা তো আইনের আশায় বসে নেই, দিব্যি তো দুই কন্যায় বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। রীতিমতো যজ্ঞ করে, অগ্নিসাক্ষী রেখে ঘর বেঁধেছেন তাঁরা। সুচন্দ্রা মনে করান, ‘‘আইনের চোখে আমরা এখনও ‘সিঙ্গল’। সে কথা ভোলার অবকাশ নেই।’’ তবু যে একটু একটু করে এগোচ্ছে সমাজ, সেইটাই আর পাঁচ জন সমকমী যুগলের মতো আশার আলো দেখাচ্ছে তাঁদেরও।

আরও পড়ুন: চাই সমানুভূতি, উৎসবের আলোয় উদ্ভাসিত ওঁরাও​

আরও পড়ুন: কর্কট-থাবা রুখতে মণ্ডপে সচেতনতার বার্তা​

তাই বলে এত দিন কি কম আনন্দ করেছেন নাকি তাঁরা? মোটেও না। সেই ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়েছে একসঙ্গে পথ চলা। ২০১৫-এ মন্ত্র পড়ে, বন্ধুবান্ধবদের নিমন্ত্রণ করে বিয়ে হয় তাঁদের। একসঙ্গে কেটেছে আরও পাঁচটি পুজো। প্রিয় জনেদের নিয়ে দিব্যি পারিবারিক আনন্দেই মাতেন ওঁরাও। যেমন শ্রী বলছিলেন, উৎসব-পার্বণের দিনে সুচন্দ্রার ভাই শহরে থাকলে আড্ডায় জমজমাট হয়ে ওঠে ওঁদের বাড়ি। শ্রী রান্নাবান্নায় পটু। বিশেষ দিনের ভোজের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব তাই তিনিই নিয়ে থাকেন।

সুচন্দ্রা আবার পুজোর সময়ে শ্রীর পারিবারিক রেওয়াজ বজায় রাখতে তাঁর জন্য কিনে আনেন পছন্দের পূজাবার্ষিকী পত্রিকা। শ্রী বলছিলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই বাবা তিনটি পত্রিকা উপহার দিতেন পুজোয়। ওই ক’টি পুজো সংখ্যা ছাড়া আমার চলে না। বাবার মৃত্যুর পরে সেই রীতি ধরে রেখেছিলেন মা। এখন মা-ও নেই। তাই সুচন্দ্রাই সে দায়িত্ব পালন করে।’’ শ্রীর বক্তব্য, এটা তাঁর এক প্রকার আবদার। পুজোর সময়ে পছন্দের পত্রিকাটা তাঁর হাতে তুলে দিতে হবে পরিবারের কাউকে। নিজে কিনে পড়লে সেই আনন্দটাই হয়ে না তাঁর!

সমকামী প্রেমের জন্য সমাজ যে সময়ে একেবারেই তৈরি ছিল না, তখন থেকেই এ ভাবে জীবন একসঙ্গে উপভোগ করেছেন তাঁরা। এই বারটা একটু আলাদা, কিছুটা হলেও যেন বদলেছে সমকামীদের প্রতি আইনের ভাব-ভঙ্গি। তাই শ্রী ও সুচন্দ্রার জুটির মতো এ বারের পুজোটা খানিক বিশেষ অনেকের কাছেই। তবে তাঁরা মনে করান, এখনও পথ চলার বাকি। আগামী পুজোগুলো যেন এনে দেয় আইনত একসঙ্গে থাকার অধিকার, একে-অপরকে পরিবার বলে ডাকার অধিকার। সেই দিনের অপেক্ষায় এখন দুই তরুণী।

ছবি: মীরা মজুমদার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE