Advertisement
Durga Puja Celebration

পুজোয় জাগে মানকর

তিন দশক আগেও মানকর ছিল জমজমাট এক গ্রাম। ১৮টি পাড়া ছিল এই দুর্গা মন্দিরের চারপাশে।

তিমা গড়ছেন বুদ্ধদেব সূত্রধর।

তিমা গড়ছেন বুদ্ধদেব সূত্রধর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৮ ১১:৪৮
Share: Save:

মৃণ্ময়ী প্রতিমা চিন্ময়ী হন ষষ্ঠীর সকালে। মানুষের ঢল নামে খয়রাশোলের একদা বর্ধিষ্ণু গ্রাম মানকরের দুর্গা মন্দিরের সামনে। বছরের অন্য সময় ঝোপ জঙ্গল, চাষের জমির মাঝখানে নিঃঝুম দুর্গা মন্দিরের চারপাশে জন মানুষের দেখা মেলে না। শুধু সকাল, সন্ধ্যায় নদী পেরিয়ে ফাঁকা মন্দিরে ধূপ জ্বালাতে যান কড়িধ্যা গ্রামের গণৎকার প্রভাত চক্রবর্তী।

তিন দশক আগেও মানকর ছিল জমজমাট এক গ্রাম। ১৮টি পাড়া ছিল এই দুর্গা মন্দিরের চারপাশে। এখন গোটাটাই ইতিহাস। এ তল্লাটের পুরনো মানুষজনের স্মৃতিপটে থাকা গ্রাম জেগে ওঠে শুধু পুজোর চারটে দিন। শতাব্দী প্রাচীণ মানকরের এই দুর্গা পুজোয় একসময় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন ভিড় করতেন। শাল নদীর ধারে দুর্গা মন্দিরে নিয়ম করে পুজোও হত এক সময়। মানকরের বাসিন্দাদের মধ্যে ১০টি গণৎকার পরিবার ছিলেন। জ্যোতিষ শাস্ত্র চর্চা আর পুজো করা, ঠিকুজি, কুষ্ঠি তৈরি করাই ছিল তাঁদের পেশা। দুর্গা পুজোও করতেন এই পরিবারগুলিই।

পরিবার বাড়লেও এই গ্রাম ছেড়ে একে একে সকলে চলে গিয়েছেন ডাকাতির ভয়ে। শহর থেকে দূরে নদীর ধারে এই গ্রামে ডাকাতদের উপদ্রব বাড়ায় মানকর ছেড়ে কিছুটা দূরে কড়িধ্যা, লোকপুর, রামপুর গ্রামে আশ্রয় নেন এখানকার বাসিন্দারা। প্রভাতের পরিবারও কড়িধ্যায় আশ্রয় নেন ডাকাতের ভয়ে। ভিটে ছাড়লেও পারিবারিক পুজোর মন্দিরকে ছাড়তে পারেননি প্রভাত। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে মন্দিরে যান।

আরও পড়ুন: স্বামী ব্রহ্মানন্দের বাড়ির পুজোয় জাগে নিদ্রাকলস​

আরও পড়ুন: রেষারেষিটা বাস-ট্রেকারের দৌড়কেও লজ্জা দেবে​

লোকপুর গ্রামে সরে গিয়েছেন অন্য শরিক উত্তম চক্রবর্তী , গৌরাঙ্গ চক্রবর্তীরা। তাঁদের কথায়, ‘‘মায়ের পুজো বন্ধ হওয়ার উপায় নেই। পালা করে প্রতি বছর পুজোর দায়িত্ব পড়লেও সকলেই হাজির থাকেন পারিবারিক পুজোয়। অনেকে দূরেও চলে গিয়েছেন। দেওঘরে থাকেন পরেশ চক্রবর্তী, গুজরাতে থাকেন স্বপন চক্রবর্তী। কিন্তু পুজোয় মানকরের মন্দিরে থাকা চাই তাঁদের। পরিবার মহিলা নমিতা চক্রবর্তী, পুজো চক্রবর্তী,প্রভাতী চক্রবর্তী বলছেন সেই আর্থিক স্বাচ্ছল্য নেই। কিন্তু নিয়ম মেনে পুজো করায় এবং আনন্দে ঘটতি নেই। ধু-ধু প্রান্তরে বছরভর একা দাঁড়িয়ে থাকা সাদা রঙের দুর্গা মন্দিরে ছেলে উত্তমকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিমা গড়ছেন বুদ্ধদেব সূত্রধর। স্থানীয় মুন্দিরা গ্রামের বাসিন্দা বুদ্ধদেব বংশ পরম্পরায় এই মন্দিরে প্রতিমা গড়েন। স্থানীয় স্কুল পড়ুয়ারা ভিড় জমিয়েছে তাঁর হাতের কাজ দেখতে। মৃণ্ময়ী কিভাবে চিন্ময়ী হন অপলকে দেখছে অসংখ্য শিশু চোখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE