Advertisement
Durga Puja Celebration

থিমে কোথাও ঈশ্বরপ্রাপ্তি, কোথাও নারীর ক্ষমতায়ন

গত কয়েক বছরের অন্যতম সেরা আবিষ্কার প্রদীপ দাসকে হাতিবাগানের কাশী বোস লেনের ‘ঘরের ছেলে’ বলা চলে।

প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আর্ট ফোরামের সদস্যদের তৈরি প্রতিমা।

প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আর্ট ফোরামের সদস্যদের তৈরি প্রতিমা।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৮ ১০:৪৬
Share: Save:

সময় বদলে যায়, বদলে যায় ‘তারা’-রাও! সময়ের সঙ্গে কেউ আরও জ্বলজ্বলে হয়ে ওঠে, কেউ নিভে যায়। পুজো ময়দানও ঠিক তেমন। কোনও কোনও তারকা-শিল্পী এখনও রয়ে গিয়েছেন স্বমহিমায়, কেউ সরে গিয়েছেন। কেউ আবার ফিরে এসেছেন অন্য ভাবে!

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুজো ময়দান থেকে সরে গিয়েছেন রণো বন্দ্যোপাধ্যায়, রূপচাঁদ কুণ্ডু, অমর সরকার। রয়ে গিয়েছেন শিল্পী ভবতোষ সুতার। এ বার তিনি ৯৫ পল্লিতে মায়ার বাঁধন থিমে মূর্তি তৈরি করেছেন খ়়ড় দিয়ে। মণ্ডপের মূল উপাদান বাঁশের। অর্জুনপুর আমরা সবাই ক্লাবে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে বিরাট শঙ্খের আকারে। মূর্তিতেও বদল এনেছেন ভবতোষ। কালীঘাট ৬৪ পল্লিতেও ভিন্ন ধারার প্রতিমা গড়েছেন তিনি।

গত কয়েক বছরের অন্যতম সেরা আবিষ্কার প্রদীপ দাসকে হাতিবাগানের কাশী বোস লেনের ‘ঘরের ছেলে’ বলা চলে। সেখানে প্রদীপ লোহা, কাঠ, কাপ়়ড়ে মুড়ে বাঙালির নিভৃতের সঙ্গী বারান্দাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। হরিদেবপুর অজেয় সংহতিতে লোহা, কাঠ দিয়েই ‘খোলা হাওয়া’র থিম সাজিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: প্লাস্টিক বর্জন করল এই পুজো কমিটিগুলি​

সরাসরি থিম তৈরি থেকে সরে এ বার প্রতিমাতেই মন দিয়েছেন শিল্পী সনাতন দিন্দা। উত্তরের কাশী বোস লেন এবং বেহালার নূতন সঙ্ঘের প্রতিমা গড়েছেন পুজো ময়দানের এই তারকা।

তরুণ শিল্পী শিবশঙ্কর দাস উল্টোডাঙার ‘সাত ক্লাব, এক পুজো’-র বিধান সঙ্ঘে তুলে ধরেছেন জীবনের প্রতিনিয়ত পার্থিব এবং অপার্থিব পুরস্কারকে। গড়িয়াহাটের মহিলা পরিচালিত পুজো হিন্দুস্থান ক্লাবে ‘শিবু’ বেছে নিয়েছেন ‘নারী’-কে।

প্রথম এগারোর ‘প্রবীণ’ সদস্য সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার ভবানীপুর অবসর, রাজডাঙা নব উদয় এবং নিউ আলিপুর সুরুচি সঙ্ঘের দায়িত্বে। অবসরের মণ্ডপে শহুরে কংক্রিটের মধ্যে সবুজকে বাঁচানোর বার্তা দিয়েছেন তিনি। মণ্ডপ সেজেছে টেরাকোটায়।

আরও পড়ুন: দুর্গার সাবেক ঐতিহ্য আজও বেঁচে বর্ধমানে​

গত বছর নলিন সরকার স্ট্রিটে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে নজর কেড়েছিলেন শিল্পী রিন্টু দাস। এ বছর দমদম পার্ক তরুণ সঙ্ঘে শিশুশ্রমিক বন্ধ করার থিমে তিনি বেছেছেন ‘গণশা’-কে। সে চায়ের দোকানে কাজ করে, ভিড়ে মিশে ঠাকুরও দেখে। মনে মনে মেরে ফেলতে চায় ‘অসুর’কে। বড়িশা ক্লাবে রিন্টু তুলে ধরেছেন টাকার পিছনে ছুটতে গিয়ে হারিয়ে ফেলা ভালবাসাকে। তাই মণ্ডপে সিলিকনের তৈরি মা শেষ সম্বল নিয়ে বসে আছেন ফুটপাতে। খিদিরপুর ২৫ পল্লি এবং সন্তোষপুর অ্যাভিনিউ সাউথে রিন্টু তুলে ধরেছেন একটি কাল্পনিক মায়াবী পরিবেশ।

নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘে অভিজ্ঞ শিল্পী সুশান্ত পাল ‘কাল’ বা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোজ বদলে দেবেন মণ্ডপের চেহারা। কী ভাবে? ‘‘সেটাই ম্যাজিক,’’ বলছেন সুশান্ত।

প্রথম একাদশের ‘তাজা রক্ত’ অনির্বাণ দাস দমদম পার্ক তরুণ দলে আবাহনের থিমে তুলে ধরেছেন মানুষের জন্ম। হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীন ফুটিয়ে তুলেছে আবর্তের থিমে মানুষের জীবনে চলার পথ এবং চেতলা অগ্রণীতে মণ্ডপ সেজেছে খারাপকে বিসর্জন দিয়ে ঈশ্বরপ্রাপ্তির ভাবনা ঘিরে।

আরও পড়ুন: আমার দুর্গা...

পুরনো শিল্পী পূর্ণেন্দু দে দমদম পার্ক ভারতচক্রে তুলে ধরেছেন ঘরে-বাইরে ‘নারীর ক্ষমতায়ন’। সল্টলেকের এ কে ব্লকে বিরাট রাবণ গড়েছেন। কেষ্টপুর প্রফুল্লকাননে সাজানো ফুলের বাগানের পাশাপাশি বোসপুকুর তালবাগানে ভাই দিব্যেন্দুকে নিয়ে অনাথ শিশুর স্বপ্ন ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।

ছোট থেকে মাটির কাছাকাছি শিল্পী পরিমল পাল। এ বার কুমোরটুলি সর্বজনীনে সেই ‘মাটি’-ই থিম। মাটিকে আঁক়ড়ে যাঁদের জীবন-জীবিকা, তাঁদের কথা উঠে এসেছে মণ্ডপে। বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘে পরিমলের ‘নারী’ থিমের মণ্ডপে প্রাচীন যুগের অপালা, লোপামুদ্রাদের পাশাপাশি উঠে এসেছেন কল্পনা চাওলা, হিমা দাসেরা। আছেন এ যুগের ‘নির্ভয়া’-রাও।

শিল্পী বিশ্বনাথ দে বেলেঘাটা ৩৩ পল্লিতে ‘ঈশান কোণে ঈশানী’ থিম ফুটিয়ে তুলেছেন জ্যামিতির সরঞ্জাম দিয়ে। বেহালা ফ্রেন্ডসের পুজোয় মানুষের বিভেদের বিরুদ্ধে বার্তা দিতেই মণ্ডপ সাজিয়েছেন তিনি।

উৎসবে প্রথম একাদশের লড়াইয়ের দিকেই তাকিয়ে পুজোর ময়দান!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE