Advertisement
Ananda Utsav 2019

কচিকাঁচাদের নির্মল হাসিতেই পুজোর আনন্দের খোঁজ

মলিন কচিকাঁচা মুখগুলিতে প্রতি বছর আলো ছড়িয়ে দেন ঝাড়গ্রাম শহরের তনুকা সেনগুপ্ত।

কিংশুক
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:০৪
Share: Save:

এবার ওরা প্রথম পুজো দেখবে! বেলপাহাড়ির বগডোবা গ্রামের ছ’বছরের খুদে মার্শাল কিস্কু, কাশমারের ন’বছরের রাহাল শবর, চিটামাটি গ্রামের মজমণি সরেন, কিংবা বছর দশের বিতান হেমব্রম আগে কখনও দুর্গাপুজো দেখেনি। কারণ ওদের গাঁয়ে পুজোও হয় না।

শারদোৎসবের আনন্দ-রোশনাইয়ের বাইরে থাকা এমনই মলিন কচিকাঁচা মুখগুলিতে প্রতি বছর আলো ছড়িয়ে দেন ঝাড়গ্রাম শহরের তনুকা সেনগুপ্ত। গ্রামের হতদরিদ্র শিশুদের সঙ্গে। ঝাড়গ্রাম জেলার অনেক প্রত্যন্ত গ্রামে দুর্গাপুজো হয় না। ভাদ্র মাসে করম, কার্তিক মাসে বাঁদনা, পৌষে টুসু-মকরের মতো পরবের সঙ্গে মূলবাসী শিশুরা বিশেষভাবে পরিচিত। কিন্তু দুর্গাপুজো কেমন হয়, সেটা ঝাড়গ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অনেক মূলবাসী শিশুই তা জানে না।

তনুকা জানান, বছর দশেক আগে শিশুদের জন্য কাজ শুরু করেন তিনি। প্রথম দিকে, প্রত্যন্ত গ্রামের সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলিতে গিয়ে শিশুদের অবৈতনিক ভাবে নাচ, গান শেখাতেন। গ্রামে ঘোরার সময়ে তনুকা লক্ষ্য করেন, এলাকার শিশুরা শরতের কাশফুল নিয়ে খেলে, অথচ তারা দুর্গাপুজোর কথা জানে না। সেই থেকেই শিশুদের পুজো দেখাবেন বলে স্থির করেন।

আরও পড়ুন:বিদেশ হয়ে গেল আজন্মের দেশ

স্বামীর দেওয়া হাত খরচের টাকা জমিয়ে বেশ কিছুটা টাকা জমিয়ে ফেলেন তিনি। এরপরে ২০১৫ সালে জামবনির মাওবাদী প্রভাবিত আমতলিয়া গ্রামের বেশ কিছু শিশুকে প্রথমবার বাস ভাড়া করে ঝাড়গ্রাম শহরের পুজো দেখাতে নিয়ে আসেন তনুকা। তারপর থেকে প্রতি বছর জেলার কোনও না কোনও প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শিশুদের এনে পুজো দেখানো, নতুন পোষাক দেওয়া, ঠাকুর দেখার ফাঁকে দুপুরে ভালমন্দ খাওয়া দাওয়া সেরে বিকেলে শিশুদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ ভাবেই প্রতি বছর উৎসবের আনন্দ শিশুদের সঙ্গে ভাগ করে নেন তনুকা ও তাঁর স্বজন-বন্ধুরা। এখন তনুকার এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন ঝাড়গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দাও। তাঁরাও এখন শিশুদের সঙ্গে সপ্তমীর সারা দিন হৈ-হৈ করে কাটান।

গত বছর বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত বাঁশকেটিয়া ও জামবনির তেঁতুলিয়া গ্রামের শিশুদের পুজো দেখিয়েছিলেন তনুকা। এ বছর সপ্তমীতে বেলপাহাড়ি ব্লকের মাওবাদী প্রভাবিত বাঁশপাহাড়ি অঞ্চলের বগডোবা, মনিয়াডি, চিটামাটি, কাশমার গ্রামের ৮০ জন শিশুকে ঝাড়গ্রাম শহরের পুজো দেখানো হবে। শিশুদের জন্য নতুন পোশাক কেনা হয়েছে। তার আগে গ্রামে গিয়ে শিশুদের পোষাকের মাপ নিয়ে আসা হয়েছে। নতুন পোষাক পরে শিশুরা প্রাতরাশ করবে। তারপরে বাসে চেপে একের পর এক মণ্ডপ পরিদর্শন। দুপুরে মাংস, ভাত, চাটনি, রসগোল্লা, পাঁপড়, আইসক্রিমের মহাভোজ সেরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা।

আরও পড়ুন:চক্ষুদানের বার্তা দিয়ে দুর্গাপুজোর থিম

ঝাড়গ্রাম শহরের কদমকানন এলাকার বাসিন্দা তনুকা ঘর সংসার সামলান। তাঁর স্বামী বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত জামবনির পড়িহাটি প্রগতি সঙ্ঘ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। কর্তা-গিন্নি মিলে শিশুদের জন্য তৈরি করেছেন একটি সংগঠন। তবে সরকারি কোনও সাহায্য নেন না তাঁরা। শিশুদের জন্য যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বেশিরভাগ খরচ জোগান বিশ্বজিৎ। বাকিটা তনুকার শুভানুধ্যায়ীদের সাহায্য। তনুকার কথায়, ‘‘শিশুদের নির্মল হাসিতেই আমার পুজোর আনন্দ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE