Advertisement
Durga Puja 2019

পূর্ব কলকাতার আরও কিছু পুজোর খুঁটিনাটি

পূর্ব কলকাতায় নজর কাড়বে কে, তারই এক ঝলক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:৪৮
Share: Save:

পুজো প্রায় দোরগোড়ায়। পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়ে গিয়েছে প্রহর গোনা। নজর কাড়বে কে, তারই এক ঝলক।

পূর্ব কলকাতা

উল্টোডাঙা বিধান সঙ্ঘ: ৫১তম বছরে থিম ‘চিকনের চিকনাই’। লখনউয়ের স্থাপত্য ও চিকন-শিল্প তুলে ধরা হবে। লখনউ রেসিডেন্সির আদলে হচ্ছে মণ্ডপ। ভিতরে-বাইরের সজ্জায় চিকনের ব্যবহার। ঝাড়লণ্ঠনেও থাকবে চিকনের আধিপত্য। প্রতিমা এমব্রয়ডারির ফ্রেমে। ফ্রেম থেকে ঝুলতে থাকা মাটির কাপড় ধরে বসে থাকবে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতী। সেলাই করে তৈরি হচ্ছে মুকুট-সহ ছ’ফুট উচ্চতার দুর্গার মুখ।

উল্টোডাঙা পল্লিশ্রী: ৭১তম বর্ষে আমাদের থিম ‘বর্ণমৈত্রী’ অর্থাৎ রামধনু। চার দিকে যে ভেদাভেদ, তার বিরুদ্ধে বার্তা দিতেই এমন ভাবনা। সাত রঙের সাতটি গেট পেরিয়ে মণ্ডপে ঢুকতে হবে। ভিতরে থার্মোকলের মডেলের উপরে রঙের কোলাজ। দুর্গার সন্তানেরা হাতে আঁকা রঙিন রূপে।

তেলেঙ্গাবাগান: এ বছরের ভাবনা ‘পুজোর আঙ্গিকে প্রার্থনা, প্রার্থনার আঙ্গিকে সব শুভ জিনিসের পুনর্জন্ম’। মণ্ডপের তিনটি ভাগ। উপরে আকাশ, মাঝে বায়ু এবং নীচে জল। তারাভরা আকাশে ভেসে বেড়াবে মেঘ। জলের তরঙ্গ বোঝাতে আলোর খেলা থাকছে। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের মূর্তি থাকছে মণ্ডপের বাইরে। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিমা হলেও মুখমণ্ডলে থাকবে সাবেকিয়ানার ছাপ। দুর্গাকে দশ অস্ত্র প্রদানকারী দেবদেবীর মডেল থাকবে।

করবাগান: ৭২তম বর্ষের থিম ‘সমাপ্তি’। শেষ থেকেও অনেক কিছু শুরু হয়। এই দুইয়ের সন্ধিক্ষণই আমরা মণ্ডপে তুলে ধরতে চাইছি। প্রথম ধাপে বিভিন্ন কাঠের পুতুল দিয়ে দেখানো হবে, একটি গাছ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে এক ধরনের সরু বাঁশ দিয়ে দেখানো হবে, সেই শেষেও প্রাণের সঞ্চার ঘটছে। তৃতীয় ধাপে দর্শকেরা দেখবেন আলোর প্রতিফলনে নতুনের পূর্ণতা।

কাঁকুড়গাছি যুবকবৃন্দ: এ বছরের ভাবনা অন্ধকারের শেষে নতুন দিনের সূচনা। থিমের নাম ‘ভোরাই’। বিরাট বজরার আদলে হচ্ছে মণ্ডপ। মণ্ডপে প্রবেশের আগে উপরে থাকবে প্লাই দিয়ে তৈরি নতুন সূর্য। অন্দরসজ্জায় ব্যবহার করা হচ্ছে প্রায় দু’হাজার নৌকার দাঁড় এবং কাঠের কাজ। মাটির বিভিন্ন কাজও থাকছে। মাটির হাঁড়ি দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঝাড়বাতি। প্রতিমা সাবেক।

কাঁকুড়গাছি মিতালি: ৮৩তম বছরের ভাবনা, ‘ছদ্মবেশ’। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি গ্রামের লোকসংস্কৃতি তুলে ধরা হবে। মণ্ডপ জুড়ে থাকবে অসংখ্য মুখোশ, পেঁচা, মাটির ভাঁড়ের কাজ, ছদ্মবেশের অসংখ্য মডেল। প্রতিমা সাবেক। কুশমণ্ডি গ্রামের শিল্পীদের একটি দল পাঁচ দিন অনুষ্ঠান করবে।

স্বপ্নার বাগান: ৬৬তম বর্ষে আমাদের ভাবনায় জল সংরক্ষণ। অবিলম্বে জলের অপচয় বন্ধ না করলে যে ভয়াবহ সঙ্কট আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, বিভিন্ন ইনস্টলেশনের মাধ্যমে সেই বার্তাই তুলে ধরব। মণ্ডপে থাকবে সমুদ্রসৈকতের পরিবেশ। নোনা জল কী ভাবে মিষ্টি জলকে গ্রাস করছে, তুলে ধরা হবে সে কথাই। থিমের সঙ্গে মানানসই প্রতিমা।

ট্যাংরা ঘোলপাড়া: এ বার পুজোর শতবর্ষ। কন্যাভ্রূণ হত্যা, গাছ কাটা, শিশুশ্রম, নারী পাচার প্রভৃতি তুলে ধরা হবে মডেলের মাধ্যমে। নারীকে সম্মান জানাতে স্বামী বিবেকানন্দ শুরু করেছিলেন কুমারী পূজা। সে কথা আরও এক বার মনে করাব। জঙ্গলের পরিবেশ থাকছে প্রাঙ্গণ জুড়ে। মূল উপাদান হিসেবে থাকছে নারকেল কাঠি, কুশ ঘাস, খড়, তারের জালি। আলো-আঁধারির পরিবেশে থাকবেন দেবী।

পূর্ব কলিকাতা সর্বজনীন: বর্তমান অস্থির সময়ে যাবতীয় অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটাতে মায়ের কাছে আবেদন জানাব আমরা। তাই ৭৩তম বর্ষের থিম ‘আর্জি’। সেই প্রার্থনা জানাতে মণ্ডপে অসংখ্য চিরকুট ঝোলানো থাকবে। মনস্কামনা পূরণে থাকবে অনেক ঘণ্টা, প্রদীপ এবং টেপা পুতুল। বাইরে থাকবে ত্রিশূল ও অনেক চোখ। প্রতিমা সাবেক।

মলপল্লি সর্বজনীন: ৬৫তম বর্ষের থিম নস্টালজিক ক্যালাইডোস্কোপ। একাধিক সমবাহু ত্রিভুজ গায়ে গায়ে লেগে জ্যামিতির বিভিন্ন গঠন তৈরি করে। মণ্ডপে তুলে ধরা হচ্ছে সেই সব। বাইরে এবং ভিতরে সমবাহু ত্রিভুজের খেলা থাকবে। ক্যালাইডোস্কোপ ঘুরিয়ে শৈশবে আমরা যা দেখতাম, তা-ই থাকবে অন্দরসজ্জায়। শান্তির প্রতীক দেবীর গড়ন এখানে বৌদ্ধ নকশার ধাঁচে।

জ’পুর ব্যায়াম সমিতি: সুদিন গিয়েছে রাজবাড়ির। বর্তমান বাসিন্দারা সকলেই বৃদ্ধ। সাবেক পুজো চালানোই দায়। এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসেন এলাকার তরুণেরা। বাঁচিয়ে তোলেন পুজোকে। এটাই এ বছরের ভাবনা। রাজবাড়ির আদলে মণ্ডপ। ইতিউতি উঁকি মারবে বট-অশ্বত্থের চারা। সিংহদুয়ার পেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দর্শনার্থীরা পৌঁছবেন মূল মণ্ডপে। ভিতরে থাকছে পুরনো দিনের পয়সার কোলাজ, ঘড়ি ও টেলিফোন।

কালিন্দী শারদোৎসব পুজো কমিটি: থিম নয়, আমরা বিশ্বাসী সাবেক পুজোয়। মণ্ডপ থেকে প্রতিমার সজ্জায় থাকছে সাবেকিয়ানা। তবে জাঁকজমক নয়, বরং সমাজসেবার কাজে ব্রতী আমরা। খুঁটিপুজোর সময়ে ৩৫ জন পথশিশুর হাতে নানা সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছিল। ওই শিশুরা যাতে পড়াশোনা চালাতে পারে, তার জন্যই এমন পদক্ষেপ। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ৫০ জন শিশু পুজো উদ্বোধন করবে।

লেক টাউন অধিবাসীবৃন্দ: নব পত্রিকার ন’টি পাতা, মাতৃরূপেণ সংস্থিতা। এ বার পুজোর মূল সুর এটাই। নবপত্রিকা পুজোর অন্যতম অঙ্গ। কলাবৌ বা গণেশের স্ত্রী নামে পরিচিতি লাভ করলেও আসলে নবপত্রিকা দুর্গার ন’টি রূপের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত। সেই সব দেবী সব অশুভের বিনাশ ঘটান। দেবীর পুজো আসলে প্রকৃতিরই পুজো।

গোলাঘাটা সম্মিলনী: ঢাকের বাদ্যি ছাড়া পুজো হয় নাকি? অঞ্জলি থেকে আরতি, আগমনি থেকে ভাসান— ঢাকের বোল। পুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ঢাকিরা। সেই ঢাকিদের জীবন অন্য কথা বলে। উপার্জনের জন্য পরিবারকে ছেড়েই উৎসব কাটে তাঁদের। সেই ঢাকিদের জীবন কাহিনি এ বার গোটা মণ্ডপ জুড়ে। তাই থিম ‘বাদক’।

নূতন পল্লি প্রদীপ সঙ্ঘ: এ বারের বিষয় আলোকবিন্দু। উৎসবের সঙ্গে আলোর যোগ সেই প্রাচীন কাল থেকে। মণ্ডপ জুড়ে তাই দেখা যাবে আলোর খেলা। লক্ষ লক্ষ আলোকবিন্দু এ বারের মূল আকর্ষণ। বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের আশ্বাস দিচ্ছি আমরা।

লেক টাউন বিবেকানন্দ স্পোর্টিং: আদিম থেকে সভ্য হয়েছে মানুষ। গাছের ছালের পোশাক আজ রূপান্তরিত আধুনিক বেশভূষায়। গুহাবাসী মানব গগনচুম্বী অট্টালিকার বাসিন্দা। বিবর্তনের হাত ধরে বদলেছে অনেক কিছুই। কিন্তু মানুষ কি প্রকৃতই সভ্য হয়েছে না কি সেই আদিম স্বভাব আজও পুষছে তারা? এমন বিষয় নিয়েই সাজবে আমাদের মণ্ডপ।

দমদম তরুণ দল: এ বারের বিষয় ‘আমি বৃহন্নলা, নহি দেবী, নহি সামান্যা নারী’। অনির্বাণ দাসের মণ্ডপসজ্জায় দেখা যাবে হাজার উড়ন্ত ঘুড়ি। ধরা পড়বে বৃহন্নলাদের স্বাধীন জীবন। আলোর কারসাজিতে ফুটিয়ে তোলা হবে তাঁদের লড়াই। বয়ঃসন্ধির সময়ে উৎসবে ঘরে আটকে থাকাই তাঁদের ভবিতব্য। সেই যন্ত্রণা ফুটিয়ে তোলা হবে চিলেকোঠার বন্দিত্বে। পাশাপাশি থাকছে বৃহন্নলাদের স্বপ্নের জগৎ। অজ্ঞাতবাসে অর্জুনের বৃহন্নলার জীবন ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে কাঠ খোদাই করে। সব শেষে সনাতন দিন্দার প্রতিমায় একই অঙ্গে কৃষ্ণ ও পার্বতী।

দমদম পার্ক ভারতচক্র: এ বারের বিষয় মূর্ত ও বিমূর্ত। দেব-দেবীরা নানা রূপে পূজিত হন। সেটাই মূর্ত রূপ। আমরা অনেক কিছুই অনুভব করি, কিন্তু তার অর্থ খুঁজি না। সেটা বিমূর্ত। পুজোর জন্য সেই বিমূর্ত প্রতীক রূপান্তরিত হয় প্রতিমায়। দেবী পার্বতী হয়ে ওঠেন অসুরদলনী। মণ্ডপে ফুটিয়ে তোলা হবে এমনই সব বিষয়। জ্ঞান থেকে ধ্যানে যাত্রা প্রকাশিত হবে বিভিন্ন রূপে।

তরুণ সঙ্ঘ: মণ্ডপে এসে সময়-যন্ত্রে চেপে দর্শকেরা পৌঁছে যাবেন ২০৯১ সালে। চারটি অংশে দেখানো হবে ভবিষ্যতের ভয়াবহতা। প্রথমে থাকছে একটি গাছ। সেখান থেকে নেমে এসেছে কয়েকটি শিশু। তাদের মুখে অক্সিজেন-মুখোশ। দ্বিতীয় পর্বে পৃথিবীর অবয়ব। তা ঢাকা পড়েছে আবাসনের ঢেউয়ে। তৃতীয় পর্বে এক উঠোনে দেখা যাবে ৩০০ বছরের মন্দির। সেই বাড়ির মালিকেরা প্রবাসী। বাড়ি গিয়েছে প্রোমোটারের হাতে। সব শেষে অপারেশন থিয়েটার। বেডে শুয়ে শীর্ণ এক গাছ।

দমদম পার্ক যুবকবৃন্দ: এ বারের বিষয় ‘জল ধরো, জল ভরো’। মূলত জল নিয়েই সচেতনতা আমাদের মণ্ডপে। প্রবেশের আগে থাকছে এক বিশাল চাতক। মেঘের দিকে তাকিয়ে জল চাইছে সে। সেই চাতকের মুখ মানুষের। মণ্ডপের একটি অংশে ‘লাইভ’ দেখা যাবে, বৃষ্টির জল কী ভাবে সঞ্চয় করে ফিরিয়ে দেওয়া যায় ভূতলে। আমরা কী ভাবে আমরা প্রতিনিয়ত জল অপচয় করে চলেছি, পরের পর্বে থাকছে তার ছবি।

দমদম পার্ক সর্বজনীন: এ বারের বিষয় অমৃতের সন্ধানে। মণ্ডপের ধাপে ধাপে দেখা যাবে মানুষ আর খাবারের সম্পর্ক। প্রথম ধাপে দেখা যাবে, লরি থেকে মাল গুদামে তোলা হচ্ছে। পরের ধাপে দর্শকেরা ঢুকবেন বাজারে। সেখানে বিকিকিনির ব্যবস্থা থাকছে। তার পরের পর্বে এক বিশাল গুদাম। যেখানে থরে থরে সাজানো খাদ্যদ্রব্য। থাকছে এক বিশাল সাইকেল। তার ক্যারিয়ারে প্রমাণ মাপের মুম্বইয়া ডাব্বা। সাইকেল এখানে চলমান জীবনের প্রতীক।

বি ই (পশ্চিম): ৩৬তম বছরে আমরা বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি থিমের মাধ্যমে। মণ্ডপের উপরে থাকবে একটি গ্লোব। দেখানো হবে সেটির নীচে আগুন জ্বলছে। মণ্ডপের নীচের অংশ মহাবালেশ্বরের কৃষ্ণবাই মন্দিরের আদলে। গাছ-পাথর ঘেরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে শিবের এই মন্দিরের আশপাশের অং‌শও অনুকরণ করছি। ভিতরে সাজানোর জন্য ব্যবহার করা হবে প্রচুর গাছ। বিশ্ব উষ্ণায়ন রুখতে আমাদের কী করণীয়, সেই নির্দেশিকা থাকবে বাইরে। সঙ্গে প্রতিমা সাবেক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE