Advertisement
Durga Puja 2019

দক্ষিণ কলকাতার আরও কিছু পুজোর খুঁটিনাটি

দক্ষিণ কলকাতায় নজর কাড়বে কে, তারই এক ঝলক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:১৪
Share: Save:

পুজোর বাকি আর সপ্তাহ দুয়েক। পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়ে গিয়েছে প্রহর গোনা। নজর কাড়বে কে, তারই এক ঝলক।

দক্ষিণ কলকাতা

বাঁশদ্রোণী একতা: আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো অসাধ্যসাধন করেছে। এক জনের চোখ দিয়ে অন্য কারও দৃষ্টি ফেরাচ্ছে, কারও হৃৎপিণ্ড জীবন দিচ্ছে মুমূর্ষুকে। মৃত্যুর সঙ্গে এই লড়াইয়ের নাম অঙ্গদান। পরিসংখ্যান বলছে, নির্দিষ্ট সময়ে অঙ্গ পাওয়া গেলে দেশে অন্তত পাঁচ লক্ষ মানুষকে বাঁচানো যেত।কিন্তু এ দেশে অঙ্গ দান নিয়ে এখনও তেমন সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। তাই থিম হিসেবে এই বিষয়টিই বেছেছি।

হরিদেবপুর নিউ স্পোর্টিং: নগর সভ্যতার চাকচিক্যে ঢাকা পড়েছে তা গড়ে তোলার ইতিহাস। নগর-ইমারত গড়ে তোলার পিছনে অবদান রয়েছে ইটভাটার মহিলা শ্রমিকদেরও। যাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে রেজা। কিশোরী বয়সে ইট ভাটায় শ্রমিক হিসেবে যোগ দিয়ে প্রতি পদে তাঁদের সঙ্গী বঞ্চনা, অপমান।আমৃত্যু এই চক্রেই বাঁধা পড়ে তাঁদের জীবন। আমাদের মণ্ডপে ফুটে উঠবে তাঁদের না-বলা কথা— ‘এই গল্পের কোনও নাম নেই’।

অবসরিকা: এ বার পুজোর ৬৪ বছর। শিশুদের কল্পনার জগতের ছোঁয়া মিলবে মণ্ডপে। শিশু অনেক সময়েই কল্প জগতে ঘোরা ফেরা করে।আবার কখনও বড় হয়ে তারা কী হতে চায়, তা-ও হয়ে ওঠে কল্পনার বিষয়। সেই ভাবনাই পেপার ও থার্মোকল কাটিংয়ের মাধ্যমে ফুটে উঠবে মণ্ডপে। প্রতিমা থিমের সঙ্গে মানান সই।

পাম অ্যাভিনিউ নিবেদিতা সঙ্ঘ: প্রতি বারের মতো আন্তরিকতা ও সর্বজনীন অনুভূতিই আমাদের পুজোর মূল আকর্ষণ। মণ্ডপে থাকবে এক চালার সাবেক প্রতিমা।সুপুরি পাতা থেকে তৈরি ছোট ছোট প্লেটের উপরে দুর্গা বিষয়ক নানা জিনিসের ছবি আঁকছি। এই প্লেট দিয়েই সাজবে মণ্ডপ।

কসবা শক্তি সঙ্ঘ: ২৪তম বছরে থিম ‘বাবুরাম সাপুড়েদের রাজ্যে’। মণ্ডপে তুলে আনা হচ্ছে বেদিয়া জন জাতির সংস্কৃতি, যা এখন লুপ্ত হওয়ার মুখে।সাপুড়েরা কী ভাবে সাপ ধরেন, খেলা দেখান— সেই বিষয়টি ছাড়াও থাকবে তাঁদের জীবন যাত্রার মডেল। মণ্ডপ সাপের ঝাঁপির আদলে। ঝাঁপিও সাপুড়েদের বীণ দিয়ে সাজবে মণ্ডপ।পুজোয় মণ্ডপে বীণ বাজাবেন কয়েক জন বেদিয়া। মা মনসার আদলে গড়া প্রতিমা, হাতে অস্ত্রের বদলে থাকবে শুধু সাপ।

আদি বালিগঞ্জ: আমাদের পুজোর বিষয়বস্তু ‘ভক্তিই শক্তি, তোমারই প্রতিমা গড়ি মন্দিরে মন্দিরে।’ বাস্তব আর কল্পনার মিশেলে তৈরি এক মন্দিরে দেবীর অধিষ্ঠান।মণ্ডপ সজ্জায় থাকছে দুই অশ্বারোহী দ্বাররক্ষীর মূর্তি এবং সূর্যের সাত ঘোড়ার প্রতীকী রূপ।

শ্রীসঙ্ঘ (কালীঘাট): ২৫তম বছরে নিবেদন ‘শক্তি আসে ভক্তিতে’। পৃথিবীতে শুভ-অশুভের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হয় শুভ শক্তিরই। পুরাণ অনুযায়ী, দেবতাদের তেজ রাশি থেকে জন্ম নেওয়া দুর্গা মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে অশুভ শক্তির বিনাশ করেছিলেন।এ বারের পুজোয় দুর্গার দশমহা বিদ্যার রূপের সঙ্গে দেখানো হবে নারীরা কী ভাবে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

রায়পুর ক্লাব: ৭০তম বর্ষে আমাদের এ বারের থিম ‘খুঁটি পুজো এক দিন নয়, প্রতি দিন’।আজকের সমাজে উন্নতি করতে গেলে খুঁটি ধরতে হয়।সেই উন্নতি আদতে নিয়ে যায় অশান্তির দিকে। তাই আমরা বলতে চাইছি, নিজেকেই খুঁটির মতো ভেবে প্রতি দিন নিজের অর্চনা করা উচিত। তাতে প্রথমে কষ্ট হলেও, পরে শান্তি আসবে।

বড়িশা সবুজ সাথী: কথায় বলে ‘যত মত তত পথ’। আমরাও সেই মতে বিশ্বাসী। ধর্মের নামে মানুষে মানুষে হানাহানি চলে। অথচ ধর্মাচরণ ঈশ্বরকে ডাকার একটি পথ মাত্র। আমাদের মণ্ডপ থেকে তেমনই বার্তা দেব। এ বার দুর্গাকে দেখাব জগন্নাথ দেবের মধ্যে দিয়ে। তাই আমাদের থিম ‘সর্ব ধর্ম সমন্বয়, জগন্নাথের রথ যাত্রা বর্ণ ময়’।শাস্ত্র মতে এ বার দেবীর আসা ও যাওয়া, দুই-ই ঘোড়ায় চড়ে। তার সঙ্গে মিল রেখেই রথের আদলে তৈরি মণ্ডপে ঘোড়া থাকবে। দর্শকেরা রথের রশিতে টান দেবেন।

বেহালা ২৯ পল্লি: এ বার পুজোর বিষয় বস্তু ‘আমার ভিতর বাহিরে’। কলকাতা থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে পুরনো বাড়ি। সেই সঙ্গে উধাও হচ্ছে খড়খড়ির পুরনো জানলা।খড়খড়ির জানলার সেই কাঠের অংশটি টানলেই ভিতরে উঁকি দেয় সূর্যের আলো। অন্ধকার ঘরে তৈরি হয় মায়াবী পরিবেশ। সেই জানলা বহু গল্প-ইতিহাসের সাক্ষী।এ বার আমাদের মণ্ডপ সজ্জায় তুলে ধরা হবে খড়খড়ির জানলার গল্প।

আদর্শ পল্লি সর্বজনীন: হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী। কখনও নারী নির্যাতন, কখনও বধূর উপরে অত্যাচার, কোথাও সন্ত্রাসবাদীর হামলা— আমরা সব সময়ে তটস্থ।একের পর এক হিংসার খবরে আমাদের মনও বিষাদে ভরে উঠছে। তাই এ বার পুজোয় চাই, মা দুর্গার আশীর্বাণীতে পৃথিবীতে ফিরুক শান্তি। এ বার আমাদের ৬২বছর।হিংসার খবর যে যে মাধ্যম থেকে আমরা পাই, সেগুলিকেই অসুর হিসেবে তুলে ধরা হবে। আর মণ্ডপে প্রার্থনার ভঙ্গিতে থাকবে বহু হাত।

ইস্ট বালিয়া সর্বজনীন: হারিয়ে যাওয়ার মুখে গ্রাম বাংলার বহু শিল্প। প্রতি বছরই পুজোর মণ্ডপ সজ্জায় আমরা তেমন শিল্পকে ব্যবহার করে থাকি।এ বার আমাদের নিবেদনে পাটের তৈরি পুতুল। পাট জাত দ্রব্যও পাটের তৈরি ওই সব পুতুল দিয়েই সাজানো হবে মণ্ডপ। বিষয় বস্তুর সঙ্গে সাযুজ্য রাখতে পুজোর দিনগুলিতে প্রতি সন্ধ্যায় আয়োজন করা হবে পুতুলনাচের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE