Advertisement
Durga Puja 2019

পুজোর আর সপ্তাহ দুয়েক, কলকাতার পাড়ায় পাড়ায় নজর কাড়বে কে, দেখে নিন

পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়ে গিয়েছে প্রহর গোনা। নজর কাড়বে কে, তারই এক ঝলক।

প্রস্তুতি: সময় কম, তাই কাজে মগ্ন শিল্পী। কালীঘাটে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

প্রস্তুতি: সময় কম, তাই কাজে মগ্ন শিল্পী। কালীঘাটে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৫:৪৮
Share: Save:

পুজো যত এগিয়ে আসছে, ততই শহর জুড়ে বাড়ছে ব্যস্ততা। পুজোর কেনাকেটার ভিড় উপচে পড়ছে বিভিন্ন দোকানে। ব্য়স্ততা বাড়ছে কুমোরটুলিতেও। সাজো সাজো রব পুজো প্যান্ডেলগুলিতেও। দেখে নেওয়া যাক শহর কলকাতার আরও কিছু পুজোর খুঁটিনাটি।

উত্তর কলকাতা

বেলগাছিয়া যুব সম্মিলনী: সাবেকিয়ানা বজায় রেখেও ৭৫তম বছরে আমাদের থিম ‘ফিরব বললেই কি ফেরা যায়’। পুরনো কলকাতার বনেদিয়ানার ঐতিহ্যকে নতু প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতেই আমাদের এ বারের প্রচেষ্টা। অঙ্কুশ ও সুমনের পরিকল্পনায় শতাব্দীপ্রাচীন বাড়ির আদলে সাজছে আমাদের পুজো মণ্ডপ। আশপাশের পুরনো বাড়িগুলিতেও থাকছে পুরনো উত্তর কলকাতার ছোঁয়া— মডেলের সাহায্যে রকে বসে আড্ডা থেকে পাড়ায় খড়-মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির মুহূর্ত। ভাঙা অথচ সদ্য রং করা পুরনো ঠাকুরদালানের আদলে সাজছে মণ্ডপের অন্দরমহল। কুমোরটুলির মহিলা শিল্পী চায়না পালের তৈরি প্রতিমাতেও রয়েছে সাবেকি ধাঁচ।

শিয়ালদহ রেলওয়ে অ্যাথলেটিক: এ বছর আমাদের পুজোর ৭২ বছর। কাশ্মীর উপত্যকায় মৃত ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আমরা। কাশ্মীরের পাহাড়ের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। পুলওয়ামা-বালাকোট স্মৃতি উস্কে দিতে মণ্ডপের বাইরে থাকছে জওয়ানদের মডেল। থাকছে কামান, সেনার ব্যবহৃত বাস এবং জিপের মডেলও। ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত নির্দেশ করতে সেখানে থাকছে একটি ছোট মন্দিরও। সেনার যুদ্ধবিমানের উড়ে যাওয়াও দেখতে পাবেন দর্শকেরা। মণ্ডপের অন্দরমহল সাজানো হচ্ছে সিন্থেটিক ফোমের তৈরি কারুকার্যে। প্রায় ১৫ ফুট উঁচু প্রতিমা সাবেকি ধাঁচের।

শ্যামপুকুর আদি সার্বজনীন: ১০৯তম বর্ষে আমাদের ভাবনা ‘সবুজ বিপ্লব’। যন্ত্র সভ্যতার আধুনিকতায় মুখ ফিরিয়েছে সবুজ। প্রাণীজগতের আজ অস্তিত্বের সঙ্কট। দূষণকে দূরে সরিয়ে সেই সবুজের বার্তাই দেবে আমাদের মণ্ডপ। শহরকেন্দ্রিক সভ্যতায় স্বল্প পরিসরে উল্লম্ব বাগান, বারান্দায় গাছ, মাটি ছাড়া গাছ লাগানোর মাধ্যমে কী ভাবে সবুজকে বাঁচিয়ে রাখা যায়, তা দেখা যাবে আমাদের মণ্ডপে। ডাবের খোলা, নারকেল ছোবড়া, চারাগাছ, পাট, বাঁশ, মাটির তৈরি জিনিসে সাজছে পুজোমণ্ডপ। প্রতিমা সাবেকি ধাঁচের।

বিধান সরণি অ্যাটলাস ক্লাব: ৩৬ বছরের পুজোয় আমাদের থিম ‘সৃষ্টি-স্থিতি’। গাড়ির ধোঁয়া, বায়ুদূষণ থেকে খড় পোড়ানোর কারণে ক্রমশ প্রকৃতি তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। প্রকৃতির সেই সৌন্দর্যকেই এ বারের পুজোমণ্ডপে দর্শকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সৃষ্টির প্রতীকী হিসেবে কাগজের প্লেট, তুলো দিয়ে মণ্ডপের বাইরে থাকছে ইনস্টলেশন। কয়েক হাজার প্লাস্টিক বল দিয়ে তৈরি হবে শিশিরবিন্দু। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে থাকছে প্রতিমা।

হরি ঘোষ স্ট্রিট সর্বজনীন: ৮০তম বর্ষে আমাদের থিম ‘বর্ণপরিচয়’। বাংলার নবজাগরণের প্রবাদপুরুষ বিদ্যাসাগর রচিত বর্ণপরিচয়ের হাত ধরেই আজও শিশুর সঙ্গে পরিচয় হয় বাংলা বর্ণমালার। তাই বাংলার ঘরে ঘরে বিদ্যার আলো জ্বালিয়ে তোলা এই মনীষীর জন্মের দ্বিশতবর্ষে তাঁকে পুজোমণ্ডপে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আমরা। এ বারের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে বইয়ের আদলে, যেখানে থাকছে বাংলা বর্ণমালার ছটা। টিনের পাত, স্পঞ্জ, থার্মোকলের তৈরি বাংলা বর্ণে সাজবে মণ্ডপের অন্দর। মডেলের সাহায্যে ছোটদের পঠনপাঠনের দৃশ্যও তুলে ধরা হচ্ছে। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে থাকছে প্রতিমা। নবমীতে ৫৬ ভোগ আমাদের পুজোর অন্যতম আকর্ষণ।

দক্ষিণ কলকাতা

পদ্মপুকুর বারোয়ারি: ৮৩তম বছরের পুজোয় আমাদের থিম ‘মন্ত্রের শক্তি’। বিজ্ঞান-নির্ভর যুগে যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে করতে মানুষ যান্ত্রিক হয়ে পড়ছে। জীবনযাত্রার মান বাড়লেও জীবনে আসছে কৃত্রিমতা। সেই কৃত্রিমতা, একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে মানুষ যোগ বা ধ্যানের শরণাপন্ন হচ্ছে। প্রতিটি মন্ত্রের আলাদা ধ্বনি ও স্বর থাকে যা মানবজীবনকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। এর মধ্যে অন্যতম হল ‘ওঁ’। এই মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে মন আনন্দিত হয়ে ওঠে, শুভ শক্তির জন্ম হয়।

বাঘা যতীন বিবেকানন্দ মিলন সঙ্ঘ: আমাদের এ বছরের প্রয়াস ‘এসো বাংলার কথা কই’। ভারতীয় ঐতিহ্যের একটি বড় অংশ হল বাংলার লোকসংস্কৃতি। কিন্তু বাংলার এই সুপ্রাচীন কারুশিল্প, গান, আদিবাসী সংস্কৃতি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আধুনিকীকরণের জেরে দ্রুত স্বকীয়তা হারাচ্ছে সেগুলি। বিভিন্ন জেলার সংস্কৃতি যেমন ছৌ, ধামসা-মাদল নাচ, ঝুমুর গান, বাউল-ফকির গান, পুতুলনাচ, কবিগান, পটচিত্রের মতো লোক আঙ্গিকগুলির নির্যাস-সহ বর্তমান সময়ের পরিবর্তিত রূপের কোলাজ থাকবে মণ্ডপে। নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করাতে ও শিল্পীদের পাশে থাকতেই এই প্রচেষ্টা।

বেহালা ইয়ং মেন্স অ্যাসোসিয়েশন: আমাদের পুজো এ বার ৭০ বছরে পা দিল। পুজোর চাঁদা তোলা থেকে যাবতীয় কাজ করছেন মহিলারা। সাবেক প্রতিমার সাজসজ্জাও তৈরি করছেন তাঁরাই। বাঁশ-কাঠ-প্লাইউড দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পুরনো ঠাকুরদালানের আদলে মণ্ডপ। অন্যতম আকর্ষণ নবমীর কুমারী পূজা। কুমারী পূজা দেখতে আশপাশের এলাকা থেকেও মানুষ ভিড় করেন।

সেবক সঙ্ঘ: ৭০তম বছরে আমাদের নিবেদন ‘তুমি আছ, তাই আমরাও আছি’। সভ্যতার আদিকাল থেকে মানুষ গাছের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে। শুধু খাদ্য নয়, নিঃশ্বাস নেওয়ার অক্সিজেন থেকে প্রাণদায়ী ওষুধ, মাথার উপরের ছাদ — অনেক কিছুই আসে গাছ থেকে। বিশ্বে জলবায়ুর ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে গাছের বড় ভূমিকা। মানুষ তাই চিরকালই গাছকে উপাসনা করেছে নানা ভাবে। তবে বর্তমানে বিষয়টি ভুলে গাছ ধ্বংসের খেলায় নেমেছে তারা। তাই এ বারের পুজোয় বার্তা, গাছ না থাকলে আমাদেরও অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে।

শহিদনগর সর্বজনীন: ৭০ বছরে পা দিল আমাদের পুজো। চিনের প্যাগোডার আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। মা থাকছেন পাঁচটি রূপে— ঐন্দ্রী, অন্নপূর্ণা, বৈষ্ণদেবী, অপরাজিতা এবং আমাদের অতি পরিচিত মহিষাসুরমর্দিনী। মণ্ডপের সামনের মাঠের আড্ডায় পাড়ার বাসিন্দারা তো বটেই, যোগ দেন প্রবাসীরাও। ক্লাবে যে কচিকাঁচারা নাচ-গান শেখে, তারাই পুজোর সন্ধ্যাগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে। ভোগ বিতরণ করা হবে রোজ দুপুরে।

জিতেন্দ্র স্মৃতি সঙ্ঘ: প্রতি বারের মতো এ বারও আমাদের মাতৃমূর্তি সাবেক। ৪৯তম বছরের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে প্লাইউড দিয়ে। দেখতে কাল্পনিক মন্দিরের মতো। পঞ্চমীর দিন থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ষষ্ঠীতে বস্ত্র বিতরণ। এ ছাড়া পুজোর প্রতিদিনই দুপুরে পাড়ার সকলে মিলে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

খিদিরপুর যুব গোষ্ঠী: ৫৮তম বছরে পা দিল আমাদের পুজো। গত তিন বছর ধরে আমরা নবদুর্গার পুজো করছি। মহালয়ার পরের দিন থেকে নবরাত্রির নিয়ম মেনে ন’দিন ধরে চলবে পুজো। এর সঙ্গে ষষ্ঠীতে বোধন হওয়ার পরে শুরু হবে বাঙালি মতে পুজো। ঠাকুরের সাজ ও পোশাকে থাকছে গুজরাতি প্রভাব। মণ্ডপে সাজছে ফাইবারের তৈরি নানা নকশা ও আলোর সাজে।

নেতাজিনগর দুর্গোৎসব কমিটি: এ বার আমাদের ৭০ বছর। সৃষ্টির ভিতরেও আর এক সৃষ্টি থাকে, যা আপাতদৃষ্টিতে মূল্যহীন। তার উপরেই নির্ভর করে এ বার আমাদের ভাবনা ‘সৃষ্টির অন্তরে সৃষ্টি’। সেই সৃষ্টির অন্তরে আমরা দেখাব তার নিজস্ব রূপ। লুকনো সেই সৃষ্টির মধ্যেও থাকবে চমক। যা দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হবে ইলিউশনের মাধ্যমে। যে সৃষ্টির খোঁজে মানুষ চিরকাল চিন্তা-ভাবনা করে, সেই ভাবনারই প্রতিফলন ঘটবে আমাদের থিমে।

উত্তর বড়িশা নবীন সঙ্ঘ: দৈনন্দিন ব্যস্ততার মাঝে হারিয়ে যেতে বসেছে মানুষে-মানুষে বন্ধন, একাত্মতা, ভালবাসা। সংবাদমাধ্যমই হোক বা সোশ্যাল মিডিয়া, প্রতিদিন চোখ রাখলেই দেখা যায়, জীবনের ময়দানে মানুষ শামিল ইঁদুর দৌড়ে। নিরন্তর
ছুটে চলার জেরে তার পিছু ফিরে চাওয়ার সময় নেই। নিজেকে প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে হবে, এই তাগিদ থেকে মানুষ হারিয়ে ফেলছে মান এবং হুঁশের দর্শন। তাই এ বার পুজোর বিষয়বস্তুর মধ্যে দিয়ে আমরা মানুষকে তার হারিয়ে যাওয়া চেতনার সঙ্গে পরিচয় করাব। পুজোর শিরোনাম তাই ‘আত্ম সন্ধানে’।

জয়রামপুর সর্বজনীন: প্রতিটি মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের অবস্থান। শুভের অধিষ্ঠান। কিন্তু আজকের দিনে
বিভিন্ন কারণে মানুষ, বিশেষত অল্পবয়সিরা নিজেদের ভিতরের সেই সুন্দর রূপটিকে অনেক সময়ে দেখতে পায় না। নানা কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আশ্বিন মাস ,কাশের বন সেই হতাশাগ্রস্ত মানুষটিকে ফের নিজের ভিতরের ইতিবাচক গুণকে টেনে বার করে আনতে সাহায্য করে। কারণ, এই সময়ে দুর্গাপুজো। ধরে নেওয়া হয়, মা দুর্গা সব অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করবেন। মানুষকে নতুন করে এগিয়ে চলার, অন্যের পাশে দাঁড়ানোর শক্তি জোগাবেন। তাই এ বার আমাদের পুজোর শিরোনাম ‘দেবী’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE