Advertisement
Durga Puja 2019

পাঁচশো বছরে অমলিন মৌতড়ের ‘বুড়ি দুর্গা’

প্রাচীন পুজো নিয়ে অনেক সময় লোকগাথা থাকে। সে দিক দিয়ে ব্যতিক্রম নয় ‘বুড়ি দুর্গা’র পুজো।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:০০
Share: Save:

ব্রাহ্মণের পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে রাজা নিষ্কর জমি দিয়েছিলেন। সে জমির ফসলে যেই সোনা-রং ধরে, রাতের অন্ধকারে কে যেন এসে সব তছনছ করে দিয়ে যায়। এক রাতে গৌরীকান্ত বেরিয়ে পড়লেন। কী হয়, নিজের চোখে দেখতে হবে। দেখেন, এক থুড়থুড়ে বুড়ি।

এমন কেন করছেন— কাছে গিয়ে জানতে চান পণ্ডিত। বুড়ি রূপ ফেলে প্রকাশিত হন দেবী দুর্গা। নির্দেশ দেন, গ্রামে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করতে। এই জনশ্রুতির প্রেক্ষাপটে প্রায় পাঁচশো বছর পার করে এল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের মৌতড় গ্রামের ‘বুড়ি দুর্গা’র পুজো।

রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েতের মঙ্গলদা গ্রাম। জেলার লোকগবেষকদের কয়েক জন জানাচ্ছেন, মৌতোড় পরিচিত কালী পুজোর জন্য। প্রতি বছর এখানে কালী পুজোয় লক্ষাধিক ভক্ত আসেন। পশু বলি হয়। সেই কালী মন্দিরও তৈরি হয়েছিল ‘বুড়ি দুর্গা’র মন্দিরের মাটি নিয়ে। কথিত আছে, ‘বুড়ি দুর্গা’র পুজোর প্রচলন করেন গৌরীকান্ত ভট্টাচার্য। তাঁর বর্তমান বংশধরদের মধ্যে প্রৌঢ় মাধবচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শক্তিপদ ভট্টাচার্য, সুবল ভট্টাচার্যরা জানাচ্ছেন, তাঁদের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের খুলনায়। তবে পণ্ডিত গৌরীকান্ত মৌতোড় গ্রামে এসেছিলেন নদীয়ার বাঁধবেড়া গ্রাম থেকে।

বংশধরদের দাবি, গৌরীকান্তের পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন পঞ্চকোটের রাজা মৌতোড় গ্রামের পাশে বান্দা মৌজায় কয়েক বিঘা জমি দান করেছিলেন। সেই জমিতে ধান চাষ হত। মাধবচন্দ্রবাবু, সুবলবাবুরা জানাচ্ছেন, কথিত আছে, জমির ফসল পাকার সময়েই কেউ ধান নষ্ট করে দিত। চাষ করতেন স্থানীয় বাউড়িরা। এই কাজ কে করছে, বুঝতে পারছিলেন না তাঁরা। এক দিন গৌরীকান্ত নিজে রহস্য অনুসন্ধানে গিয়ে দেবীর
নির্দেশ পান।

প্রাচীন পুজো নিয়ে অনেক সময় লোকগাথা থাকে। সে দিক দিয়ে ব্যতিক্রম নয় ‘বুড়ি দুর্গা’র পুজো। এই পুজোর রয়েছে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্যও। যেমন, এখানে মহিষাসুরের বদলে থাকে শুধু অসুর। দেবীর বাঁ দিকে গণেশ আর ডান দিকে কার্তিক। পুজোর ভোগ রান্নায় অবশ্যই দিতে হবে কারণবারি। কেন এই নিয়ম, সেটা অবশ্য জানা নেই বর্তমান বংশধরদের। তাঁদের কথায়, ‘‘পুজোর প্রতিষ্ঠাতারা হয়তো কোনও কারণে এই নিয়ম শুরু করেছিলেন। পাঁচ শতাব্দী ধরে পরবর্তী প্রজন্ম সেই নিয়মই পালন করে আসছে।”

নামে পারিবারিক পুজো হলেও এখন পুরো গ্রাম এই পুজোয় যোগ দেয়। দশমীর দিনে মহাভোজ। পাত পেড়ে প্রসাদ নেন প্রচুর লোক। কলা বৌকে পুকুরে স্নান করিয়ে পাল্কিতে চাপিয়ে আনা হয়। বিসর্জনও হয় পাল্কিতে করেই। সময় জীর্ণ করেছিল প্রাচীন মন্দিরকে। বর্তমান প্রজন্মের লোকজন সংস্কার করিয়েছেন। তবে তাঁদের আক্ষেপ থেকে গিয়েছে— আগে মন্দিরে খোদাই করা ছিল রাম রাবণের যুদ্ধের ছবি। সংস্কারের সময়ে সেটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2019 Ananda Utsav 2019 Puja Porikroma
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE