Advertisement
Durga Puja 2020

ঘরেই মণ্ডপের মেজাজ, মন দিয়ে উমাকে দেখুন

ভিড় এড়াতে সারাক্ষণ ফেসবুকও ইউটিউবে পুজোর সরাসরি সম্প্রচার করবে সুরুচি সঙ্ঘও।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২০ ১৮:০৯
Share: Save:

দোহাই, পুজোয় মাকে দেখার চেষ্টা করবেন না! মা-ই আপনাদের দেখবেন।

এবং শুধু দেখা নয়। বাড়িতে বসে যে কোনও সময়ে মণ্ডপ, আলো, প্রতিমা, থিমের চোখ জুড়ানো হীরক খণ্ড বারবার ইচ্ছে মতো দেখা যাবে। বছর আটত্রিশের যুবক, পুজো দেখার নতুন আঙ্গিক নিয়ে ব্যস্ত নীলাঞ্জন চক্রবর্তী হাসছিলেন। ‘‘অগস্ট নাগাদ যখন বুঝলাম পুজোটা হবেই, বেজায় ভয় পেয়ে মাথা খাটিয়ে ভাবছিলাম কী করা যায়।’’ সোশ্যাল মিডিয়ার যে কোনও ভিডিয়ো, এমনকি বৈদ্যুতিন মাধ্যমের পুজো পরিক্রমার থেকে আলাদা একটা অনুভূতি কীভাবে আনা যেতে পারে? যাতে মণ্ডপের মেজাজটা ধরা যায় ঘরে বসেই? একটি ওয়েব সাইটে (অগমেন্টেডপুজো২০২০) গোটা পঞ্চাশেক পুজো ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরায় মেলে ধরছেন নীলাঞ্জনেরা। ঠিক যেন মণ্ডপের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া, কিন্তু ঠেলাঠেলি বিহীন। যেখানে পছন্দ, থমকে দাঁড়ান। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকান। জ়ুম করুন। এগোন, পিছোন। সপ্তমী থেকে ১৫দিন, স্বল্প টাকার টিকিটে যখন-তখন দেখার সুযোগ।

সেক্টর ফাইভের ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের পড়ুয়া অঙ্কিতা দে এবং তাঁর বন্ধুদের উদ্যমে আবার চমৎকৃত হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন। হিডকোর সহায়তায় অঙ্কিতা দের তৈরি অ্যাপে এক সঙ্গে দেড়শোরও বেশি পুজো দেখার সুযোগ। ‘‘অতিমারিতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকলেও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করাটা দারুণ। প্রযুক্তিতে দখলের জোরে তরুণ কলেজ পড়ুয়ারাও পুজোয় যুক্ত হচ্ছেন।’’— বলছেন দেবাশিস বাবু। মাঝবয়সি বা বয়স্কদের মৌরসিপাট্টা ভাঙছে ‘পূজাভিআর’ বলে আর একটি অ্যাপেও। সানি দত্ত, সব্যসাচী চৌধুরী, অংশুমান ভট্টাচার্যেরা চেষ্টা করছেন সামান্য টিকিটের বিনিময়ে ২০ টি পুজোর খুঁটিনাটি মেলে ধরতে। নীলাঞ্জনের কথায়, ‘‘অ্যাপে মণ্ডপ- ভ্রমণের টিকিটের আয়ের অংশ পাবে পুজো কমিটিগুলিই।দুঃস্থপুজো-শিল্পী বা কর্মীদের পাশে থাকতে চাই।’’

আরও পড়ুন: গোটা গ্রামই এখন মাতে রায়েদের পুজোয়

মণ্ডপে না গিয়ে অথবা না থেমে থিম বা প্রতিমা দর্শনের কৌশলের নানা রকমফের। কাশীবোস লেনের সোমেন দত্তেরা বিধানসরণিতেই এলইডি স্ক্রিন বসিয়েছেন। ছোটরা বা বয়স্কেরা থাকলে জোড় হাতে মণ্ডপে না ঢোকার অনুরোধ। আগের বারের মতো ‘পুজো আসছে বছর আবার হবে’ বলে ইন্দ্রনীল সেনের থিম- গানে স্পষ্ট ঘরে থাকার ডাক দিচ্ছে টালা প্রত্যয়। মণ্ডপে ছোট্ট প্রতিমার পিছনে পর্দায় অনেক গুণবর্ধিত ছবি, দূর থেকে দেখা যাচ্ছে। ‘জিগসপাজ়লে’র মতো সে-ছবির টুকরো ভাঙছে- গড়ছে।

ভিড় এড়াতে সারাক্ষণ ফেসবুকও ইউটিউবে পুজোর সরাসরি সম্প্রচার করবে সুরুচি সঙ্ঘও। ‘‘এবার আরও বেশি মানুষ আমাদের পুজো দেখবেন।’’— আশাবাদী ওই পুজোর অন্যতম কর্তা তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। নীলাঞ্জন-অঙ্কিতারা আত্মবিশ্বাসী, টিভিতে ক্রিকেট দেখার মতো ফোনেই বেশি খুঁটিয়ে পুজো দেখার সুযোগ এবার। কোনও কোনও পুজো কর্তা অবশ্য সংশয়ী, সম্পাদনার কারিকুরিতে সত্যি উপস্থাপনার সঙ্গে আপস করা হবেনা তো? শিল্পী সনাতন দিন্দা বলছেন, ‘‘মণ্ডপের কম আলোর পরিবেশ ক্যামেরায় ঠিক মতো তুলে ধরা জরুরি।’’

আরও পড়ুন: অনটনে পুজো বন্ধ, ৩০ বছর কাঠামো আগলে সরকারবাড়ি

এভাবে পুজো তুলে ধরার কিছু সুবিধাও দেখছেন পোড় খাওয়া শিল্পী পার্থ দাশগুপ্ত। ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক সর্বজনীনের মণ্ডপের যাত্রা পথ টানাটকের মতো তিনটি জ়োনে ভাগ করা। সৈকত কুণ্ডুর কবিতা পড়ছেন দেবশঙ্কর হালদার। মণ্ডপের ছবি পাল্টানোর পাশাপাশি পাল্টাচ্ছে আলোর কাজও। পার্থবাবুর মতে, পরিস্থিতি অনুযায়ী পুজোকেও তো পাল্টাতেহ বে। ‘‘পুজোর থিমে মিশে থাকা কবিতাও পুজোর বার্তা এভাবে মেলে ধরার জন্য ভার্চুয়াল মাধ্যমই আদর্শ।’’— বলছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE